ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ আগামীর পথে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন সামনে রেখে ভোটের বছরে ৪ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ২৫ এবং মূল বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এবার মূল বাজেটের যে আকার মুহিত ধরেছেন, তা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৮.৩ শতাংশ। গতবছর প্রস্তাবিত বাজেট ছিল জিডিপিরি ১৮ শতাংশ। প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ কোটি টাকার এই বাজেটের মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা; যার ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা যাবে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)। আর অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১২ বার বাজেট দেওয়ার রেকর্ড স্পর্শ করা মুহিত বিশাল এই ব্যয়ের প্রায় ৭৩ শতাংশ অর্থ রাজস্ব খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছেন। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন মুহিত। এছাড়া বৈদেশিক অনুদান থেকে চার হাজার ৫১ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে কাজেট প্রস্তাবে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, আদায় সন্তোষজনক না হওয়ায় তা সংশোধন করে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। সংশোধন করে তা ৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকায় নামানো হয়। অর্থমন্ত্রী সংসদের সামনে যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। ঘাটতির এই পরিমাণ মোট জিডিপির ৫ শতাংশের মত। এই ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীর সহায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণ। তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা ধার করে ওই ঘাটতি মেটানো যাবে।
মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশে রাখার লক্ষ্য: গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখার রাখার লক্ষ্য ঠিক করে বর্তমান সরকারের শেষ বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ কোটি টাকার এই বাজেট প্রস্তাব করেন তিনি। বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন মুহিত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মে মাস শেষে (২০১৭ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের মে পর্যন্ত) গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) মে মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
করমুক্ত আয়সীমা আগের মতই আড়াই লাখ: নতুন অর্থবছরে সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা আগের মতই থাকছে। যাদের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কম, তাদের কোনো কর দিতে হবে না। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে তিনি এই প্রস্তাব রাখেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যক্তি শ্রেণির ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছিল। ওই হার বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বছরে করমুক্ত আয়ের সাধারণ সীমা ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নারী করদাতাসহ বিভিন্ন শ্রেণির করদাতাদের জন্য এ সীমা কিছুটা বেশি ছিল। করমুক্ত আয়ের সীমা কী হবে তা নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি যে উন্নত দেশগুলোতে করমুক্ত আয়সীমা সাধারণভাবে মাথাপিছু আয়ের ২৫ শতাংশের নীচে থাকে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে করমুক্ত আয়সীমা সাধারণত মাথাপিছু আয়ের সমান বা তার কম থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে করমুক্ত আয়ের সীমা মাথাপিছু আয়ের প্রায় দ্বিগুণের মত। অর্থাৎ, আমাদের করমুক্ত আয়ের সীমা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের তুলনায় অনেক বেশি। করমুক্ত আয়ের সীমা বেশি হলে কর প্রদানে সক্ষম বিপুলসংখ্যক ব্যক্তি করজালের বাইরে থেকে যান। এতে করের ভিত্তি দুর্বল থাকে। মুহিত বলেন, সার্বিক বিবেচনায় আমি আগামি বছরে করমুক্ত আয়ের সাধারণ সীমা ও করহার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করছি। তবে কোনো ব্যক্তি-করদাতার প্রতিবন্ধী সন্তান বা পোষ্য থাকলে প্রত্যেক সন্তান বা পোষ্যের জন্য তার করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা করে বাড়ানোর সুপারিশ করেন মুহিত। অর্থাৎ, কোনো করদাতার একজন প্রতিবন্ধী সন্তান বা পোষ্য থাকলে তার করমুক্ত আয়সীমা হবে তিন লাখ টাকা।
দুটি গাড়ি, ৮ হাজার বর্গফুটের বাড়িতে ১০% সারচার্জ: নিজ নামে দুটি গাড়ি বা সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ৮ হাজার বর্গফুট আয়তনের গৃহ-সম্পত্তির উপর ১০ শতাংশ হারে সারচার্জ বসানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এই প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। মুহিত বলেন, এ বছর সারচার্জের ক্ষেত্রে কিছুটা সংস্কার করে নীট পরিসম্পদের ভিত্তিতে সারচার্জ আরোপের পাশাপাশি যাদের নিজ নামে দুটি করে গাড়ি রয়েছে বা সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ৮ হাজার বর্গফুট আয়তনের গৃহ-সম্পত্তি রয়েছে তাদেরকেও সারচার্জের আওতায় আনার প্রস্তাব করছি। এছাড়া নীট পরিসম্পদের প্রদর্শিত মূল্যের ভিত্তিতে আরোপিত সারচার্জের বিদ্যমান হার বহাল রাখার প্রস্তাব করেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, নীট পরিসম্পদের মূল্যমান ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা অতিক্রম করলে নূন্যতম সারচার্জের পরিমাণ ৩ হাজার টাকা এবং ১০ কোটি টাকা অতিক্রম করলে নূন্যতম সারচার্জের পরিমাণ ৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী করদাতার ওই ব্যবসায় হতে অর্জিত আয়ের উপর বিদ্যমান ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সারচার্জ বহাল থাকবে।
৭.৮% প্রবৃদ্ধির আশা: সাত দশমিক আট শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, যাতে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন মুহিত। রাজস্ব আয়, বিনিয়োগ ও বৈদেশিক সাহায্য বৃদ্ধি, রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশা করে প্রবৃদ্ধির এই লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন তিনি। নতুন বাজেটে টাকার অংকে জিডিপি ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে জিডিপির আকার ২২ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ধরা হলেও সংশোধিত বাজেটে সেটাকে বাড়িয়ে ২২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) তথ্য হিসাব করে বলছে, ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যের বিপরীতে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়।
ব্যাংক-বীমা-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর কমছে: বিনিয়োগকারীদের টানতে নতুন বছরের বাজেটে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর কমানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আরোপিত কর বিদ্যমান ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। আর অতালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আরোপিত কর বিদ্যমান ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য সব ধরনের কোম্পানির ক্ষেত্রে আরোপিত করহার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেকে বলে থাকেন আমাদের কর্পোরেট করহার খুব বেশি। কথাটি ঠিক নয়। পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির বিদ্যমান করহার ২৫ শতাংশ, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় যা বেশ কম। এছাড়া, আমাদের করহার বৈশ্বিক গড়হার (২৪.২৯ শতাংশ) এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তবে ব্যাংকিং খাতের করহার কিছুটা বেশি হওয়ায় আমি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ২.৫ শতাংশ হ্রাস করার প্রস্তাব করছি। এতে এ খাত হতে রাজস্ব কিছুটা কমলেও বিনিয়োগকারীদের প্রতি ইতিবাচক বার্তা যাবে। অন্যান্য কোম্পানি করহার অপরিবর্তিত রাখার কথা জানিয়ে মুহিত বলেন, মোটামুটিভাবে বর্তমান সর্বোচ্চ করহার হবে বাস্তবে ৪০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় হারটি হবে ৩৭.৫ শতাংশ। একমাত্র তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী ও নন-পাবলিকলি ট্রেডেড মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিরা এর চেয়ে উচ্চহারে কর দেবেন।
ঘাটতি এক লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা: চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের এটাই শেষ বাজেট। গত অর্থবছরের বাজেট ছিল চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে দুপুর ১২টা ৫৩ মিনিটে বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম হচ্ছে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’। প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি আছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী জানান, বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। তিনি জানান, ঘাটতি অর্থায়নে বৈদিশিক সূত্র থেকে ৫৪ হাজার ৬৭ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে ৭১ হাজার ২২ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, মোট রাজস্ব আয় তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে এ যাবৎ আমাদের গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং গত দুই বছর এ প্রবৃদ্ধির হার হয়েছে ৭ শতাংশের ঊর্ধ্বে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাবমতে আমাদের প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা এখন এই মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ প্রণয়নের কাজ শুরু করেছি।
বাজেটের টাকা আসবে কোত্থেকে: প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে অর্থায়নের অন্যতম উৎস কর। টাকা আসবে বেশিরভাগই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর থেকে। প্রস্তাবিত বাজেটের ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ অর্থ আসবে ওই কর থেকে, যা দেশের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ দেবে। এ ছাড়া বৈদেশিক ঋণ থেকে আসবে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন তিনি। বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের এটাই শেষ বাজেট। গত অর্থবছরের বাজেট ছিল চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী জানান, প্রস্তাবিত বাজেটের দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা আসবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর থেকে। এটা মোট অর্থায়নের ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া মূল্য সংযোজন কর থেকে ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ, আমদানি শুল্ক থেকে ১১ শতাংশ, আয়কর থেকে ৩৪ শতাংশ, সম্পূরক শুল্ক থেকে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ আসবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডবহির্ভূত কর থেকে আসবে ২ দশমিক ১ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ঋণ থেকে আসবে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ। বৈদেশিক অনুদান আসবে দশমিক ৯ শতাংশ। কর ব্যতীত পাওয়া যাবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
স্কুলবাসে শুল্ক ছাড়: স্কুলশিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বাস আমদানি হলে তাতে শুল্কে ছাড় দেবে সরকার। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় একথা জানান। মুহিত বলেন, ঢাকা শহরে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য অধিকাংশ স্কুলেই কোনো স্কুলবাস নেই। তাই অভিভাবকরা নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার করে তাদের সন্তানদের স্কুলে যাতায়াত নিশ্চিত করতে বাধ্য হচ্ছে, যা ঢাকা মহানগরীতে যানজট সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা পালন করে। স্কুলবাস চালু করা হলে যানজট নিরসনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সহজ ও নিরাপদ হবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সি স্কুল বাস সার্ভিস চালুর আগ্রহ প্রকাশ করলে তা যথাযথ বিবেচনায় বিশেষ শুল্ক সুবিধায় আমদানির সুযোগ দেওয়া হবে।