আজকের প্রভাত রিপোর্ট: গণমাধ্যমের ওপর সরকারের কোনো চাপ নেই উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, এই স্বাধীনতাকে কাজে লাগিয়ে গণমাধ্যমকে সাহসের সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দৈনিক সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এসব মন্তব্য করেন তিনি।
তথ্যের অবাধ প্রবাহের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, সঠিক তথ্য ব্যাপকভাবে প্রচার না হওয়ায় গুজব ও অপ-তথ্যের দ্বারা মানুষ প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত হচ্ছে। গুজব ও অপ-তথ্য প্রতিরোধে গণমাধ্যমকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গণমাধ্যমের ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগের গল্প গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে। আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের জনস্মৃতিতে রাখতে গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সমালোচনা করে এই উপদেষ্টা বলেন, ওই সময় অনেক গণমাধ্যমকর্মী ভয়ে সত্য ঘটনা প্রকাশ করতে পারেননি। এখন সেই সময় কেটে গেছে। তিনি ফ্যাসিবাদী সরকারের গুম, দুর্নীতিসহ সব অপকর্মের তথ্য গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
গণমাধ্যমের গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সরকার গণমাধ্যমের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করে। তিনি বলেন, বিগত রেজিমে সাংবাদিকদের নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। সবার প্রত্যাশা সামনের দিনগুলোতে যেন এ ধরনের পরিস্থিতি আর না হয়। আমরা সবাই মিলে যেন একটি মুক্ত গণমাধ্যম নিশ্চিত করতে পারি।
গণমাধ্যমের সংস্কার প্রসঙ্গে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সরকার গণমাধ্যমের সংস্কারের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কমিশন গঠন করেছে। কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গণমাধ্যমের সংস্কার করা হবে। তিনি আরও বলেন, টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকপক্ষ তাদের দাবি ও সমস্যাগুলো জানিয়েছে। যেমন- বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের প্রাইস রেগুলেশনের বিষয়ে তারা বলেছেন। পে-চ্যানেলের কথা বলেছেন, বিদেশি চ্যানেলগুলোর বিষয়ে নীতিমালার কথা বলেছেন। এ ছাড়াও তারা টিআরপি’র বিষয়টিও বলেছেন। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আবার তাদের সঙ্গে বসবো। যৌক্তিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশকে নিয়ে গুজব ও অপপ্রচার চলছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অভ্যুত্থান এবং সরকারকে নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশের মিডিয়াতেও এমন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, এ অপপ্রচার শুধু সরকারের বিরুদ্ধে নয়, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশকে নিয়ে যে অপপ্রচার হচ্ছে তার কাউন্টার দেয়ার জন্য এবং প্রকৃত সত্য তুলে ধরার জন্য আমাদের সরকারসহ গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সবার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি, সবার মতামত নিয়েছি।
মতবিনিময় সভায় নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, ডেইলি স্টার বাংলার সম্পাদক গোলাম মর্তুজাসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদক ও তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় অন্যদের মধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।