ডেস্ক রিপোর্ট: চারদিকে শোকাতুর মানুষের ভিড়। পরিবার, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীসহ সবার চোখে অশ্রুর স্রোত। এমন আবেগঘন পরিবেশের মধ্যে অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। শনিবার (২ ডিসেম্বর) বাদ আসর বনানী কবরস্থানে ছেলে মো. শারাফুল হকের কবরে তাকে সমাহিত করা হয়।
পরিবার ও আত্মীয়স্বজন সবার উপস্থিতিতে শনিবার বিকাল সোয়া ৫টায় আনিসুল হকের দাফন শুরু হয়। পরিবার ও স্বজনরা প্রয়াত মেয়রের কবরে মুঠো মুঠো মাটি দিয়েছেন। ধীরে ধীরে কবর ঢেকে যায় মাটিতে। বিকাল সাড়ে ৫টায় শেষ হয় দাফন। শীতল মাটিতে সবশ্রেণির মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চিরবিদায় নিলেন তিনি।
দাফনের সময় মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন উপস্থিত সবাই। দোয়া মোনাজাত শেষে কবরের ওপর ফুল দিয়ে আনিসুল হকের প্রতি জানানো হয় পরম ভালোবাসা।
আজ শনিবার রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে বাদ আসর আনিসুল হকের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বিপুলসংখ্যক মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও চোখের জলে তাকে রাখা হয় সমাধিতে।
এর আগে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়িয়ে আনিসুল হকের জানাজায় শরিক হন লাখো মানুষ। প্রয়াত মেয়রকে চিরবিদায় জানাতে আসা অগণিত মানুষ, বিশিষ্টজন ও পরিবারের সদস্যরা জানাজার নামাজ আদায় করেন। তাদের অনেকের চোখ ভিজে উঠেছিল শোকে।
জানাজা শেষে স্টেডিয়ামে উপস্থিত কেউ কেউ দুই হাত তুলে অশ্রুসজল নয়নে প্রয়াত মেয়রের জন্য প্রার্থনা করেন। এদিন সকাল থেকেই প্রয়াত মেয়রকে শ্রদ্ধা জানাতে স্টেডিয়ামে জড়ো হন তারা।
শনিবার বিকাল ৩টায় আনিসুল হকের বনানীর বাসা থেকে আর্মি স্টেডিয়ামে আসে মরদেহ। এখানে মরহুমের প্রতি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হয়। এর আগে দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে প্রয়াত মেয়রের মরদেহ দেখতে তার বাসায় যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আনিসুল হকের স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদের সমবেদনা জানান তিনি।
লন্ডনে সাড়ে চার মাসেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে (লন্ডন সময় বিকাল ৪টা ২৩ মিনিট) লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আনিসুল হকের মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। শুক্রবার লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার দুপুর পৌনে ১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনিসুল হকের মরদেহ বহনকারী বিমান অবতরণ করে। তারপর সরাসরি বনানীর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।
এদিকে মেয়র আনিসুল হক স্মরণে শুক্রবার ডিএনসিসির নগরভবনসহ পাঁচটি অঞ্চলে একযোগে শোক বই খোলা হয়েছে। নগরবাসী তাকে স্মরণ করে এসব বইয়ে শোকবার্তা প্রদান করছেন।
১৯৫২ সালের ২৭ অক্টোবর ফেনী জেলার সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন আনিসুল হক। দাদার বাড়ি চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলার কবিরহাট উপজেলায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। বর্তমান সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক তার ছোট ভাই। স্ত্রী রুবানা হকসহ তিন সন্তানকে রেখে গেছেন তিনি।
উপস্থাপক হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন আনিসুল হক। পরবর্তীতে তৈরি পোশাক খাতের সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন তিনি। এরপর বিভিন্ন সময়ে বিজিএমইএ, এফবিসিসিআই ও সার্ক চেম্বারের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
মেয়র আনিসুল হক ছিলেন একাধারে ব্যবসায়ী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিবিদ। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।
মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক বর্তমানে মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাদের সংসারে এসেছে চার সন্তান। ছোট ছেলে মো. শারাফুল হক ২০০২ সালের ৭ এপ্রিল মারা যান। বাকি তিন সন্তানের মধ্যে ছেলে নাভিদুল হক বর্তমানে মোহাম্মদী গ্রুপের পরিচালক, মেয়ে ওয়ামিক উমায়রা ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনে কাজ করছেন। তানিশা হক সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন।