ডেস্ক রিপোর্ট: বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আমরা আশা করব প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদত্যাগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। শুধু দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসীর কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এই নির্বাচন কমিশনের দ্বারা সুষ্ঠু ভোট আয়োজন সম্ভব নয়। সুতরাং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন অত্যন্ত জরুরি।’
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘খুলনার কারচুপির নতুন মডেলের নির্বাচনে দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় বইলেও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের নেতারা খুলনার নির্বাচন নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর গিলছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, খুলনার ভোট ডাকাতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলেও হেরেছে গণতন্ত্র, হেরেছে ভোটাধিকার, হেরেছে নির্বাচন কমিশন।’
রিজভী আরো বলেন, ‘খুলনা সিটি নির্বাচনে ভোট কেলেঙ্কারির আরেকটি নতুন মডেল জনগণ প্রত্যক্ষ করল। এই নতুন মডেলের ভোট ডাকাতির আবিষ্কারক শেখ হাসিনা। সুতরাং ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী ও সুষ্ঠু ভোট পরস্পরের প্রতিপক্ষ। তাই তার অধীনে কখনোই কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হতে পারে না।’
তিনি বলেন, দেশের সর্বত্রই নির্বাচনে ভোটা ডাকাতি, চুরি, কেন্দ্র দখল, লাইন ধরে সিল মারা, প্রতিপক্ষের এজেন্টদের বের করে দেওয়া, ২০-৩০ মিনিটে ১২০০ ব্যালটে সিল মারা, মরা ব্যক্তির ভোট প্রদান ইত্যাদি নতুন মডেলের নির্বাচন, ‘শেখ হাসিনা মার্কা’ নির্বাচনের দৃষ্টান্ত।
খালেদা জিয়ার কারাবাসের বিষয়ে রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জাল নথি তৈরির মাধ্যমে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সাজা দেয়া হয়েছে। উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর এখনো তাঁকে মুক্তি দিচ্ছে না সরকার। বরং নতুন নতুন জামিনযোগ্য মামলায় তাঁকে আটকানো হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। বিশ্বব্যাপীও আজ নিন্দার ঝড় উঠেছে তাঁকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়ায়। তিনি যেসব মামলায় অতীতে জামিনে ছিলেন সেসব মামলায়ও তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘কারাগারে খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, দিন দিন শারীরিক অবস্থা ক্রম অবনতিশীল। তিনি হাত ও পায়ের ব্যথায় প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছেন। হাঁটুর ব্যথার যন্ত্রণায় হাঁটতে পারছেন না, ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন দেয়ার পরও কীভাবে একজন বয়স্ক মানুষকে কারাগারে আটকে রেখে কষ্ট দেয়া হচ্ছে। পবিত্র মাহে রমজানেও তাঁর ওপর সর্বোচ্চ জুলুম চলছে।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনকে তিলে তিলে শেষ করে দিতেই শেখ হাসিনার নির্দেশে জামিনযোগ্য মামলায় তাঁকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। আওয়ামী সরকারই নানা ফন্দি-ফিকির করছে কীভাবে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রেখে আবারও ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির মতো প্রহসনের নির্বাচন করা যায়।’
বিএনপি আগামী নির্বাচন থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি দূরে সরে যাচ্ছে না বরং আপনারাই নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন ৫ জানুয়ারির পুনরাবৃত্তি করার জন্য। সেজন্য আবারও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি মাস্টারপ্লান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেটিরই আভাস পাওয়া যাচ্ছে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে। বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিএনপিকে মাইনাস করে প্রহসনের নির্বাচন আর এ দেশে হতে দেওয়া হবে না। আগামী নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন জনগণ হতে দেবে না।’
প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য প্রতিরক্ষা চুক্তিসহ নানা গোপন চুক্তির মাধ্যমে দেশ বিক্রি করে দিতে পারেন তাঁর কাছে গণতন্ত্রই বা কী আর অবাধ নির্বাচনই বা কী, কোনোটিরই কোনো দাম নেই। ক্ষমতার আমলকি করতলে ধরে রাখার জন্য তারা এহেন অনাচার নেই যেটি করছেন না।’