প্রমিতি রহমান: গ্রীষ্মের তাপের পর বর্ষার আগমনে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে আকাশের একটুখানি মনোরম রূপ। বাংলাদেশের সাধারণত, প্রায় সব ঋতুর পরিবর্তন বেশ মনোমুগ্ধকর তবে বর্ষাকালের আবহাওয়া সকলের মনে সিগ্ধতা দিয়ে যায়। বর্ষাকাল গ্রীষ্মের পর আসে এবং তীব্র গ্রীষ্মের তাপ থেকে প্রয়োজনীয় স্বস্তি নিয়ে আসে। বর্ষাকাল প্রায় জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
বর্ষার দিনে বারান্দায় বসে গরম চা বা কফি চুমুক দিতে দিতে বা ঝাপসা কাচের জানালার পাশে বসে কফি পান করতে কাটানো মুহূর্ত অনেকের পছন্দ। বৃষ্টির শব্দের সাথে কফির গন্ধ উপভোগ করা খুবই মনোরম। এমন দিনে প্রতিবেশীদের ডেকে সন্ধ্যায় তাদের সাথে চা বা কফি উপভোগ করা একটি ভাল ধারণা। যারা একাকীত্ব পছন্দ করেন, তারা হালকা গান শুনতে বা বই পড়তে পারেন এবং আবহাওয়ার আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। মানুষরা নিজেদের মানসিক চাপ কমাতে বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দও উপভোগ করেন। কখনও কখনও ভারী বৃষ্টির পর হঠাৎ করে আকাশে একটি রংধনু ঝলসে ওঠে
এই ঋতুতে হাওর এবং নদীগুলি সমুদ্রের মতো হয়ে ওঠে, গ্রামের রাস্তা কাদায় ঢাকা পড়ে, এবং সর্বত্র ব্যাঙ ও পোকামাকড়ের শব্দ শোনা যায়। বর্ষাকাল আমাদের জন্য সবচেয়ে বিশেষ ঋতুগুলির একটি। বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙ্গা বেশ আরামদায়ক। এছাড়াও, সকালের বৃষ্টি আমাদের একটি সতেজ অনুভূতি দেয় যখন আমরা বৃষ্টিস্নাত সবুজ মাঠে হাঁটতে যাই।
বর্ষাকালে সর্বত্র প্রকৃতি আরও সবুজ হয়ে ওঠে। এটি ভ্রমণের জন্য একটি ভাল সময়। বিশেষ করে সিলেট, কুমিল্লা, বান্দরবান, চট্টগ্রাম বর্ষাকালে ঘোরার জন্য দুর্দান্ত। এই সময়টি দেশের বিভিন্ন ঝর্ণা পরিদর্শনের জন্য উপযুক্ত সময়। তবে মনোমুগ্ধকর ঋতু হলেও এই বর্ষাকালে নিচুস্থান গুলো বন্যায় প্লাবিত হয়ে যায়। এর ফলে ওই সকল এলাকায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি শুরু হয়। বন্যায় অনেক এলাকায় পানি উঠে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির অভাব হয়। তার ফলে অনেক বয়স্ক মানুষ থেকে ছোট ছোট বাচ্চাদের পানিবাহিত রোগ হয়। ডায়রিয়া,কলেরা, জন্ডিস, আমাশয় এধরণের অনেক রোগের লক্ষন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পরে।
বর্ষাকাল অনেকের মধ্যে আনন্দ নিয়ে আসলেও কিছু মানুষের জন্য খুব কষ্টদায়ক। বৃষ্টি আমাদের শীতল আবহাওয়া দেয় তবে রাস্তা হয়ে ওঠে অগোছালো এবং বিশৃঙ্খল। রাস্তাগুলি কাদামাখা পানিতে ভরে যায় এবং জলাবদ্ধতার কারণে মানুষ যানজটে আটকে থাকে। এই যানজটের ফলে বাচ্চারা স্কুলে দেরিতে পৌঁছায়, মানুষ অফিসে দেরিতে পৌঁছায় এবং কখনও কখনও অতিরিক্ত তাড়াহুড়া, যানজট এবং কম দৃশ্যমানতার কারণে দুর্ঘটনাও ঘটে। বর্ষার দিনে নদীনালা খাল বিল জলাশয়ে বাড়ি বেড়ে উঠে। পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় বলে মাছের বেড়ে ওঠার পক্ষেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে নদ-নদীগুলো পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠায় তা নদীপথে যাত্রী কিংবা ব্যবসায়িক পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে ।
প্রকৃতির এই অপরূপ বর্ষার সৌন্দর্য্য সকলের কাছে অত্যন্ত প্রিয় হলেও কিছু মানুষের জীবনে ভোগান্তি দিয়ে যায়। কিন্তু তবুও মানুষ গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপ থেকে বাঁচতে বর্ষার সিগ্ধ প্রকৃতি সবাই সানন্দে বরণ করে।