আজকের প্রভাত ডেস্ক
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের কোনো শত্রুতা নেই জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এখন যুক্তিবিমূখ কুসংস্কারাচ্ছন্ন পশ্চাৎপদ চিন্তাধারার রাজনীতিবিদরা ভারত শাসন করছে। ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন ভারতের সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠী সাম্প্রদায়িকতাকে পুঁজি করে আশকারা দিচ্ছে কট্টর হিন্দুত্ববাদী অপরাধপ্রবণ জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোকে। মিথ্যা বলাই এদের রাজনৈতিক ইশতেহার।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ওদের মিথ্যা কথা চেঁচানোর রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। ভারতের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্রমাগত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ভারত কখনোই সহাবস্থানের লিটেরেসি আয়ত্ত করেনি। যে কারণেই আশপাশের দেশগুলোর পরিচিত পরিপার্শ্বকে উপেক্ষা করে আগ্রাসনের পথ ধরে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের সবদেশেই রয়েছে ধর্মের নামে অথবা বর্ণের নামে উগ্রবাদীদের দৌরাত্ম্য। তারা সব দেশ, জাতি-গোষ্ঠী, সব সমাজ, সব ধর্মের জন্য চরম ক্ষতিকারক। দুঃখের বিষয় হলো কিছু ধর্মীয় উগ্রবাদী ক্ষুদ্র গোষ্ঠী ভারতের চরম সাম্প্রদায়িক সংগঠন বিজেপির প্রত্যক্ষ মদদে-উসকানিতে বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান এই উগ্রবাদীদের নিয়ন্ত্রণ করুন।
তিনি বলেন, ভারতের সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের কোনো শত্রুতা নেই। কিন্তু চরম উগ্রবাদী বিজেপি যদি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে চায় তাহলে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক প্রতিটা মানুষ এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব-সম্মান আত্মমর্যাদা রক্ষায় রুখে দাঁড়াবে। দুর্জয় এ বাংলাদেশ কখনোই মাথা নোয়াবে না।
রিজভী বলেন, কলকাতা সহকারী-হাইকমিশন, আগরতলা সহকারী হাইকমিশনে হামলা, মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে হাঙ্গামা এবং ধারাবাহিক চরম উসকানিমূলক বক্তব্য ও সীমাহীন অপপ্রচারের বিরুদ্ধে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হিংস্র আগ্রাসী হস্তক্ষেপের ঘটনা ও ভারতের বাংলাদেশ-বিরোধী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ছেলেরাও মিছিল নিয়ে বেরিয়ে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, গতকাল সিলেটের সুতারকান্দি স্থলবন্দরের ওপারে ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ দিয়ে রীতিমতো পদযাত্রা করে হিন্দু উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশে ঢুকার চেষ্টা সরাসরি আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে উগ্রবাদী বিজেপির উসকানিমূলক তৎপরতারই অংশ। তার আগে উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা বিজেপি সরকারের উসকানিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের নিষ্ক্রিয় উপস্থিতিতে আগরতলার কুঞ্জবনে অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে নারকীয় হামলা, জাতীয় পতাকা ছিড়ে আগুন, পতাকার খুঁটি ভাঙচুর, সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরের সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত করে।
রিজভী বলেন, আগরতলায় কূটনৈতিক মিশনের ওপর এধরনের নজিরবিহীন হামলা ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশন, ১৯৬১ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ভারতীয় সরকার হামলার জন্য দুঃখ প্রকাশের নাটক করলেও, অতীতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের আগ্রাসী হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে, যা আরও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী আমাদের হাইকমিশনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
তিনি বলেন, এই অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সহায়তা চাওয়া। আমরা ভারতের উগ্রবাদী হিন্দুদের বলব- আপনাদের বন্ধুত্ব তো শেখ হাসিনার সঙ্গে। সেই বন্ধুত্ব রক্ষায় বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যে প্রকাশ্যে শত্রুতায় নেমেছেন সেটা সৎ প্রতিবেশী সুলভ আচরণ নয়। হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে আপনাদের বন্ধু হাসিনা আপনাদের কাছে আশ্রয় পেয়েছে। তাকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন।