ডেস্ক রিপোর্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিমান চলবে সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক নিয়মে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা আন্তর্জাতিকমানের নিশ্চিত করতে কেউ কোনও বাধা দিতে পারবে না। এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা অবশ্যই আমাদের মেনে নিতে হবে। এতে কোনও বাধা দেওয়া যাবে না। দেশের কোথায় কি হচ্ছে সে বিষয়ে আমার সার্বক্ষণিক নজরদারি আছে। বিমানের সুনাম বাড়াতে কাজ করছি। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
একই সঙ্গে নিয়ম না মানা ভিআইপিদের সতর্কও করেছেন তিনি। ভিআইপিসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকের নিয়ম না মানার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিরাপত্তা বিষয়টাতে অনেক গুরুত্ব দিয়েছি, সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি। নিরাপত্তার যে নিয়মগুলো আন্তজার্তিক পর্যায়ে আছে, আমাদের সব যাত্রীকে সেটা মেনে নিতে হবে।’
নিয়ম অমান্যকারীদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, ‘এখানে আমি স্পষ্ট বলতে চাই, আমাদের যারা সংসদ সদস্যরা আছেন, আমাদের এখানে মন্ত্রীরা আছেন, বাহিনীপ্রধানরা আছেন বা অন্যান্য ঊর্ধ্বতন অফিসাররাও আছেন- দয়া করে আপনারা যখন বিদেশে যান, যেভাবে নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করা হয়, ঠিক সেভাবে আমাদের বিমানবন্দর করতে হবে। সেটা সবাইকে মেনে নিতে হবে।’ ‘সেখানে কেউ কোনো বাধা দিতে পারবে না। আর যদি কেউ এক্ষেত্রে বাধা দেয়, তাহলে ভবিষ্যতে বিমানে চড়া বন্ধ হয়ে যাবে। অন্তত আমি সেটা করবো। সেটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।’
অনিয়মের খবর তার কাছে পৌঁছে যায় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন, আমার তো আর কোনো কাজ নেই, সারাদিন দেশের কাজই করি। কাজেই কোথায় কী হয়, না হয়, খোঁজ-খবরগুলো নেওয়ার চেষ্টা করি। কাজেই কেউ সেখানে কোনো রকম অনিময় বা ব্যত্যয় ঘটাতে গেলে সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু আমার কাছে খবরটা চলে আসে। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।’
স্বর্ণপাচার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এগুলো বন্ধ করতে হবে। বিমানের সুনাম আন্তর্জাতিকভাবে যেন বৃদ্ধি পায়।’ দুর্নীতি-অনিয়মে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি- যেই করবেন তাদের কিন্তু ছাড়া হবে না; যেই হোক না কেন। আমরা বাংলাদেশকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি ক্ত করে গড়ে তুলতে চাই।’
বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি পুরোপুরি বন্ধের নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের যারা বিদেশে কাজ করে, যাদের অর্থে আমরা বৈদেশিক মুদা অর্জন করি, আমাদের রিজার্ভ নিশ্চিত হয়, তারা যখন একটা কর্মস্থল থেকে ফেরে, নানাভাবে তাদের অনেক সময় হয়রানি করা হয়।’ ‘এখন এটা অনেকটা কমে গেছে। তারপরও আমি বলবো যে, যারা আমাদের দেশের নাগরিক বিদেশে যায়, আমরা সেখানে জনশক্তি রপ্তানিও করি এবং সেখান থেকে বিরাট অংকের বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করি; তাদের সুবিধাগুলো দেখতে হবে, তাদের যেন কোনোরকম হয়রানি এখানে করা না হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।’
এর আগে সকাল ১০টায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এসেই জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে নতুন যুক্ত হওয়া বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৯ সিরিজের নতুন দু’টি উড়োজাহাজ ‘সোনার তরী’ ও ‘অচীন পাখি’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে দেশের অ্যাভিয়েশন সেক্টরের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন তিনি। পরে ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স’ নামে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। এ অ্যাপের মাধ্যমে বিমানের টিকিট কাটলে ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এসব উন্নয়নকাজ উদ্বোধনের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, বিমানের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ইনামুল বারী, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান, বিমান সচিব মহিবুল হক, বিমানের এমডি মোকাব্বির হোসেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্টদূত নোয়াকি ইতো প্রমুখ।