রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ, ১৪৩১

এরিয়া ক্লিন অপারেশন দেখে গেলেন অং সান সূচী

editor
নভেম্বর ১৫, ২০১৭ ৪:৫৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

অধ্যাপক মোঃ আনিসুর রহমান ফরাজী: ২ নভেম্বর মিয়ানমারের রাখাইন আরাকান রাজ্য সফরে এলেন অং সান সূচী। রাজকীয় অভিজাত্য সমৃদ্ধ হাস্যোজ্জল বদনে নেমে এলেন বিশেষ নিরাপত্ত¡া বলয়ের মধ্যে দিয়ে আরাকান রাজ্যে সামরিক হেলিকপ্টার যোগে। হাস্যোজ্জল নয়নে চেয়ে চেয়ে দেখলেন সফল এরিয়া ক্লিন অপারেশন। ছোট করে বললেন ”তোমরা আর ঝগড়া করোনা”! এ কিসের প্রতিফলন? লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাঁদের ঘর-বাড়ী পুড়িয়ে, আবাল-বৃদ্ধবণিতা রোহিঙ্গাঁদের নিধন করে, পাশবিক অত্যাচার করে মা-বোনদের ইজ্জত নষ্ট করে সফল এরিয়া ক্লিন অপারেশন দেখে উৎফুল্ল চিত্তে¡ রোহিঙ্গাঁদের উদ্দেশ্যে বলে গেলেন ”তোমরা আর ঝগড়া করোনা”। কিন্তু কোন সমাধান তো এলো না। তা হলে কি হবে রোহিঙ্গাঁদের?
বিশ্ববাসী আজ স্পষ্টতই বুঝতে পারছেন আরাকান রাজ্যর এরিয়া ক্লিন অপারেশনের নেপথ্যে কি? বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র যার ঐতিহ্য, অভিজাত্য ও গর্বিত ইতিহাস রয়েছে। কোন সামারিক জান্তার পৃষ্ট আরোহন করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়নি! হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাংগালী সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর বলিষ্ট নেতৃত্তে¡ বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। পাকিস্তানের সামরিক জান্তাদের দমন পীড়নে বাংগালী জাতি হার মানে নি। বরঞ্চ পাকিস্তানি সামরিক জান্তারাই তাদেরই ললাটে কলঙ্ক লেপন করে বাংলাদেশ থেকে চির বিদায় নিয়েছে। ৭ কোটি বাংগালীর স্থলে আজ ১৭ কোটি বাংগালী। জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন। রক্তের প্রবাহে তিনিও কোন দিন হার মানবেন না। গোটা বাংগালী জাতির কোন দিন হার মানবে না। রোহিঙ্গাদের প্রতি আমরা মানবতার হাত বাড়িয়েছি। বিশ্ববাসী তা সমর্থন দিয়েছেন । প্রসংশা করেছেন বাংলাদেশের। মানবিক সহযোগীতা ও সহায়তা দিচ্ছেন। জাতিসংঘ সহ বিশ্বের সচেতন মানব সভ্যতার কান্ডারীগন এগিয়ে আসছেন। বিশ্বের প্রচার মাধ্যমে সরাসরি প্রতিবেদন সম্প্রচার হচ্ছে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ কি করছে। সরকারী বেসরকারী সকল সংস্থা রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা দিচ্ছেন। কিন্তু এদের নাগরিক অধিকার কে দিবে? অং সান সূচি যিনি বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানী খেতাব নোবেল বিজয়ী হয়েছেন কিসের মহিমায়? বিশ্বের সর্বপরিচিত একটি নাম শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সূচি। আরাকান রাজ্যে তার অগমন কি শান্তি বয়ে আনলো? বিশ্ব দরবারে আজ তিনি কিভাবে উপস্থিত হলেন এই রাজকীয় হাস্যজ্জল বদনে? বিশ্ববিবেক আজ প্রশ্ন রাখতে পারেন। তার এই সফর আজ শান্তির বার্তা বয়ে আনে নি। বয়ে এনেছে এরিয়া ক্লিন অপারেশনের নায়কদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তিনি তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে বলে গেলেন ”তোমরা আর ঝগড়া করোনা”। লক্ষ লক্ষ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা, মা-বোনদের উপর পাশবিক নির্যাতন, আরাকান রাজ্যের আধমরা অধিবাসীদের বাংলাদেশে পুশ ইন; এ কি একটি নিছক ঝগড়া?
একটি রাজ্যের পুরো জাতিকে নিধন করা সফল হয়েছে দেখে উৎফুল্ল বদন দেখানো একি মানবতার কন্ডারীর মানবতার লক্ষন? ক্ষমতার লোভ মানুষকে হিং¯্র পশু করে তোলে। আবার একদিন এই পশুগুলি সাধারন মানুষের কাছেই হার মানে। মানুষই পশুকে বাঁচিয়ে রাখে। তবে এখানে রাজনীতি সমাজ চিন্তা, কুটনীতি সবই যেন হার মানছে। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিপর্যয় আজ মানব সভ্যতার বিপর্যয়। এ বিপর্যয়ে কিছুতেই হার মানা যায় না।
যেখানে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের ভাত কাপড় আছে সেখানে ১০-১২ লক্ষ অতিথির ভাত-কাপড় ও বাসস্থানের ব্যবস্থা না হয় হলো তবে এই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান কি হবে? রোহিঙ্গাদের তাদের রাজ্য বিভিন্ন পরিসংখ্যানে প্রকাশিত হয়েছে, বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শিশুদের মাঝে ২৭ হাজার শিশু রয়েছে পরবর্তী হিসেবে এর সংখ্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। এই অনাথ, পিতৃ-মাতৃহীন শিশুদের ভবিষ্যৎ কিভাবে গড়ে উঠবে? এছাড়াও স্বামী হারা মহিলা রয়েছে, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রয়েছে। পুরো রোহিঙ্গা সমাজ আজ কর্মহীন অলস সময় কাটাচ্ছে। নিজ ভূমি ছেড়ে পরদেশে এরা কি করবে, যাদের সীমানার বাইরে আমার অনুমতি নেই, কর্মের সংস্থান নেই, শিক্ষার ব্যবস্থা নেই, নাগরিকত্ব নেই। পর্যায়ক্রমে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমস্ত পরিকল্পনা, মায়ানমার সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, কুটনৈতিক সম্পর্ক, আলাপ-আলোচনা সবই ভেস্তে যাচ্ছে। সমস্ত বাঁধা অতিক্রম করে রোহিঙ্গা নারী পুরুষ সমবেত হচ্ছে আর দফায় দফায় বাংলাদেশে ঢুকছে। কবে হবে এর সমাপ্তি? উখিয়া এবং এর পার্শবর্তী অঞ্চলে আজ ঠাঁই নেই, মানুষে মানুষে লোকারণ্য, বাড়ছে অনেক রোগব্যাধি, হাট-বাজারে দ্রব্যমূল্যের অপ্রতুলতা এবং বাড়তি দাম, শিক্ষার্থী যারা তারা স্কুল-কলেজে যেতে পারছেনা, হাসপাতালগুলোতে মেঝের মাঝেও স্থান সংকুলান,হচ্ছেনা ঐ সমস্ত আরাকানবাসীর বাংলাদেশে অবস্থার কারনে। ধ্বংশ হচ্ছে পাহাড়, গাছ ও বনভূমি। এসমস্ত মিলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এক চরম সংকটে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে শ্রীঘ্রই একটি স্থায়ী সমাধান একন্তই প্রয়োজন।
লেখকঃ অধ্যাপক মোঃ আনিসুর রহমান ফরাজী
অধ্যক্ষ, ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং কলেজ
টঙ্গি, গাজীপুর। Email- forazy@gmail.com

Please follow and like us:

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial