নিজস্ব প্রতিনিধি: মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা বেদনাবিধুর উল্লেখ করে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সফররত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা বলেছেন, মিয়ানমার-বাংলাদেশের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করা হবে। নিরাপদ প্রত্যাবাসনসহ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। সে লক্ষ্যে রাশিয়া ও চীন একমত পোষণ করেছে।
রোববার বাংলাদেশে সফররত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান গুস্তাভো মেজা-চুয়াদ্রার নেতৃত্বে ১৫ সদস্যদের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা। সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে রোহিঙ্গারা যাতে স্বেচ্ছায় নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন সেই লক্ষ্যে কাজ করার অঙ্গীকার করেন নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। কথা বলার আগে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন সফরকারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এ সফর রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
রোববার সকালে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের তুমব্রু জিরো পয়েন্টে রোহিঙ্গাদের জীবনমান দেখতে যান সফররত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ টিম। সেখানে তারা অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় চোখের সামনেই বাবা সৈয়দ আলম ও মা সখিনাকে গুলি করে হত্যার দৃশ্য দেখে ছোট ভাই-বোনকে নিয়ে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা কিশোরী আমেনা কান্নায় ভেঙে পড়ে। তাকে বারবার সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন সফররত দলের প্রধান। তারা কিশোরী আমেনার বাবাসহ রাখাইনে হত্যার শিকার সবার বিচার পেতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এ সময় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২৬ সদস্যকে কাছে পেয়ে স্বজন হত্যার বিচার দাবি করেন রোহিঙ্গারা। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাও হত্যাকারীর বিচারের আশ্বাস দেন।
তুমব্রু জিরো পয়েন্ট পরিদর্শন শেষে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন নিরাপত্তা পরিষদ সদস্যরা। উভয় স্থানেই তারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের কাছে তাদের ওপর চালানো মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্মমতার বর্ণনা দেন।
রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে দু’দিনের সফরে শনিবার বিকেলে কুয়েত এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে ইরাক থেকে সরাসরি কক্সবাজারে আসেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলটি।
কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে দলটি উখিয়ার ইনানীর রয়েল টিউলিপ হোটেলে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, শরণার্থী সচিব আবুল কালাম, চট্টগ্রামের রেঞ্জের ডি আইজি এ এইচ এম মনিরুজ্জামান, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার ড. একে ইকবাল হোসেন, উখিয়া সার্কেল চাই লাউ মারমা, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি একরামুল ছিদ্দিক ও উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, রোববার বিকেলেই বিশেষ বিমানে প্রতিনিধিদল ঢাকা ফিরে যাবেন। ঢাকায় আগামী সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা মিয়ানমার যাবেন।