
শুভ দেব চাকমা, রাঙামাটি: রাঙামাটির সদর উপজেলার ২ নং ফটিকছড়ি ইউনিয়নের সত্তা এলাকা—একটি জনবহুল জনপদ, অথচ উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বহু দূরে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এ অঞ্চলটি বর্ষায় যেন নদীতে ডুবে যায়, আর শুষ্ক মৌসুমে হয়ে পড়ে কাদা আর ধুলায় থইথই। এখানকার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার প্রতিদিন যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে—নদীভাঙনের হুমকিতে, রাস্তার দুর্ভোগে, আর রাষ্ট্রীয় অবহেলার ভারে।বর্ষা এলে সড়কপথ তলিয়ে যায় পানিতে, তখন নৌকাই একমাত্র ভরসা। আর শীতকালে নদীপথ শুকিয়ে গেলে নৌকাও চলে না, গাড়িও চলে না—কেবল চলে ক্লান্ত মানুষের পা। যেন আধুনিক যুগে দাঁড়িয়ে থেকেও সত্তা একটি উপেক্ষিত দ্বীপ।এই এলাকারই একজন শিক্ষার্থী, সম্পা চাকমা—যিনি রাঙামাটি সরকারি কলেজে অনার্স চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত—আক্ষেপ করে বলেন,
“নদীভাঙন রোধ না করলে হয়তো একদিন আমাদের বসতভিটাও থাকবে না। সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় রাঙামাটি না খাগড়াছড়ি—এই দ্বিধায় পড়ে কারো পক্ষেই যেন দায়িত্ব নেওয়ার সময় নেই।”এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বহুবার পানি উন্নয়ন বোর্ডে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। এমনকি সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার নিজেও লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করেছিলেন। কিন্তু তা আজও ধূলিসাৎ।একজন এসও সরেজমিন পরিদর্শনে এলেও, তাঁর কোনো মতামত জনসমক্ষে আসেনি।স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন,
“সত্তা একটি দুর্গম এলাকা—তাই কেউ গুরুত্ব দেয় না। অথচ উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এই অঞ্চলেই।”
এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগে সাংবাদিক হিসেবে আমি বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর দৃষ্টিতে আনলে তিনি আন্তরিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। তিনি জানান, খুব শিগগিরই তিনি নিজেই সত্তা এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে যাবেন। এলাকাবাসী এই আশ্বাসকে স্বাগত জানালেও প্রশ্ন রেখেছেন—
“আশ্বাস আর কতকাল?”
এলাকাবাসীর মুখে এখন একটাই স্লোগান—
“আমরাও দেশের নাগরিক, আমরাও উন্নয়ন চাই। বর্ষা আর নদীর গর্জনে নয়, আমরা চাই একটি নিরাপদ পথ, স্থায়ী বাঁধ, আর সরকারি সদিচ্ছা।”সত্তা কি বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে বিচ্ছিন্ন? নাকি উন্নয়ন শুধু শহরের জন্য, প্রান্তিক মানুষের জন্য নয়?প্রশ্নটি আজ রাষ্ট্রের কাছে—সত্যিকারের উন্নয়ন কি শুধুই প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ থাকবে, না কি এই প্রান্তিক কণ্ঠস্বরও একদিন রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে প্রতিফলিত হবে?