ডেস্ক রিপোর্ট: স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, বৈষম্য ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়তে প্রয়োজন অর্থশাস্ত্র ও নৈতিকতার মাঝে সমন্বয় সাধন। নৈতিকতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নীতিমালা প্রণয়নের সময় অর্থনীতির সঙ্গে নৈতিকতাকে যুক্ত করতে হবে, তবেই দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন সম্ভব হবে।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির তিন দিনব্যাপী ২০তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। এতে অন্যান্যের মধ্যে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এবং সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
স্পিকার বলেন, ‘কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দিয়েই আয়বৈষম্য ও দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন প্রবৃদ্ধির সুবিধা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া।’ সম্পদের সুষ্ঠু সমবন্টন নিশ্চিত করতে পারলে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হবে।’
স্পিকার বলেন, ‘নৈতিকতার সঙ্গে অর্থনীতিকে যুক্ত করলে আমরা দারিদ্র্য বিমোচন এবং বৈষম্য নিরসনের ক্ষেত্রে আরও কার্যকর নীতি, পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারি। বিশ্ব অর্থনীতিতেও আজ বৈষম্য প্রবল। এমডিজিতে বৈষম্য দূর করার ওপর জোর দেওয়া হয়নি। তবে এসডিজিতে বৈষম্য নিরসনে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির সঙ্গে নৈতিকতার যোগসূত্র রয়েছে। তবে এই যোগসূত্র অত্যন্ত জটিল। অর্থনীতিকে আমরা কিভাবে ব্যাখ্যা করছি এর ওপর এই সম্পর্ক নির্ভর করে। যদি মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলি, তাহলে সম্পর্ক এক রকম। আর যদি মুনাফা ও লোকসানের কথা বিবেচনা করি তবে সম্পর্ক অন্য রকম।’ নৈতিকতার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ও নেতিবাচক চিন্তাও জড়িত বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত অগ্রসরমান। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সব সূচকে বাংলাদেশ শক্ত ভিতের ওপর অবস্থান করছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ধারাবাহিকভাবে অর্জিত হচ্ছে। বৈদেশিক রিজার্ভ ১৬শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। রফতানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ শতাংশ এবং প্রবাসী আয় বেড়েছে ১২ শতাংশ। জনবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণের ফলে দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২৩ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফলতা অর্জন করেছে। এর ধারাবাহিকতায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ২০৩০ অর্জনেও সক্ষম হবে ।’ তিনি বৈষম্য ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাইকে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী আজ নৈতিকতা ও বিচার ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। ব্যাংকিং খাতে ঋণ খেলাপী বাড়ছে, যা দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংক ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলবে। বিত্তবানরা ঋণ নিয়ে খেলাপী হচ্ছেন। অপরদিকে গরীবরা ঋণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পুঁজিবাজারে এখনও জুয়ার আসর বসে। এর সবই হচ্ছে নৈতিকতার অভাবে।’
অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় এবছর তিন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব হোসেন (মরণোত্তর), অধ্যাপক রেহমান সোবহান এবং অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরীকে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি স্বর্ণপদক সম্মাননা-২০১৭ প্রদান করা হয়।
স্পিকার অনুষ্ঠানে রেহমান সোবহান ও অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী এবং ড. মাহবুব হোসেনের মেয়ের হাতে স্বর্ণপদক সম্মাননা তুলে দেন। তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের চারটি প্লেনারি সেশনে পাঁচটি প্রবন্ধ এবং বারোটি কর্ম-অধিবেশনে ১১৫টি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হবে।