প্রধানমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ কায়দায় মিথ্যাচার করছেন: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিনিধি: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ কায়দায় মিথ্যাচার করেছেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে কতগুলো কথা বলেছেন যার সঙ্গে সত্যের কোনও সম্পর্ক নেই।’ খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলে নির্বাচনে না আসতে পারলে নির্বাচন কারও জন্য থেমে থাকবে না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৫ জানুয়ারি নির্বাচনে শতকরা ৫ ভাগ মানুষও ভোট দেয়নি। ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বিনা ভোটে নির্বাচিত সেই সংসদ জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংসদের প্রতি জনগণের কোনও প্রতিনিধিত্ব ও আস্থা নেই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলে নির্বাচনে না আসতে পারলে নির্বাচন কারও জন্য থেমে থাকবে না এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ কায়দায় মিথ্যাচার করেছেন। তিনি কতগুলো কথা বলেছেন যার সঙ্গে সত্যের কোনও সম্পর্ক নেই । আজকে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগ আবার একতরফা নির্বাচন করার পাঁয়তারা ও নীলনকশা করছে। সেই নীলনকশা অনুযায়ী তারা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক চাপিয়ে তাকে দণ্ড দিয়েছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা কথা মানতে হবে যে খালেদা জিয়াকে যে আদালত দণ্ড দিয়েছেন তা কার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা যখন নিম্ন আদালতের বিচারকদের কোড অব কন্ডাক্ট গেজেট করা নিয়ে আপত্তি দিয়েছিল এবং সংবিধানের ১৬ সংশোধনী নিয়ে কথা বললো তখন তাকে জোর করে বিদেশ পাঠিয়ে দেওয়া হলো। তারপর পদত্যাগে বাধ্য করা হলো। পরে নিম্ন আদালতের বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করে সরকার বিচার বিভাগকে পুরোপুরি পাকাপোক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করে নিয়েছে।’
ফখরুল বলেন, ‘কয়েকদিন আগে নিম্ন আদালতে একটা সার্কুলার গেছে যে সতর্কভাবে বিচারকাজ পরিচালনা করতে হবে।অর্থাৎ তাদেরকে ক্লিয়ার বলে দেওয়া হয়েছে বিএনপি বা বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা জামিনের জন্য গেলে, জামিন দেওয়া হবে নাকি হবে না তা চিন্তা করা হবে। পুরোপুরি জুডিশিয়ালের ওপর হস্তক্ষেপ। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘অবিলম্বে বিচারবিভাগের ওপর সকারের হস্তক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপির ৭ ধারায় ছিল, রাষ্ট্রপতি অর্ডার-৮ ধারা অনুযায়ী কোনও দণ্ডিত ব্যক্তি দলের পদের জন্য নির্বাচিত হতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি সেই ৮ ধারা এখন বাতিল। আর সমাজের কোনও দাগী আসামি হতে পারবে না, সেটা এখন আছে। মেজর কোনও পরিবর্তন হয়নি। আর বিএনপির কে প্রধান হলো আর কে দায়িত্ব নিলো তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মাথা ব্যথা হলো কেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে আওয়ামী লীগের এতো ভয় কেন? তিনি (খালেদা জিয়া) নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে, নাকি করবেন না এটা নিয়ে এতো কথা কেন প্রধানমন্ত্রীর? জানি খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিলে আপনাদের অসুবিধা হয়। কিন্তু তিনি নির্বাচনে অংশ না নিলে সেই নির্বাচন কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।’
এই সপ্তাহে খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য আবেদন করা হবে বলে জানান ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই। এ ভাবে ছলচাতুরি করে দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আর যাই হোক জনগণের ভালোবাসা পাওয়া যাবে না। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। বাংলাদেশের জনগণ তাদের অধিকার সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। যুগে যুগে মানুষ আন্দোলন ও সংগ্রাম করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। এবারও মানুষ তাদের ভোটের অধিকার আদায় করবে। ’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top