বাংলাদেশের কেউ টেম্পারিং করলে আরও কঠিন শাস্তি : পাপন

ক্রীড়া প্রতিবেদক: এমন নয় ক্রিকেটে আগে কখনো বল টেম্পারিং হয়নি। হয়েছে। প্রচুর হয়েছে। মাঝে ধরা বা ভাবা হতো বল টেম্পারিং হলো রিভার্স সুইং করানোর একটা কার্যকর উপাদান। গোপনে, খুব সতর্ক ও সাবধানে বিশ্বের অনেক বড় বড় ফাস্টবোলারও এই কাজটি করে থাকেন মনে করা হয়। তবে বল টেম্পারিংয়ের অভিযুক্তদের তালিকায় পাকিস্তানিদের নামই বেশি।
পাকিস্তান তথা বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের সেরাদের তালিকায় নাম থাকবে বা আছে এমন তিন জীবন্ত কিংবদন্তি ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম আর ওয়াকার ইউনুসের সঙ্গে সাবেক গতিতারকা শোয়েব আখতারের বিরুদ্ধেও বল বানানোর (বল টেম্পারিংয়ের চলতি ভাষা) অভিযোগ আছে বিস্তর।
এর বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ডু প্লেসিস, ভারতের শচিন টেন্ডুলকারের মতো বড় নামও বল টেম্পারিংয়ের সঙ্গে জড়িয়েছে। কিন্তু কঠিন সত্য হলো, তাদের কেউ প্রকাশ্যে সে অভিযোগ স্বীকার করেননি।
এবার তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ক্যাপ্টেন স্টিভেন স্মিথ। তিনি অকপটে বল টেম্পারিংয়ের কথা স্বীকার করেছেন। তার সঙ্গে ডেভিড ওয়ার্নার আর ক্যামেরুন বেনক্রফটের বল টেম্পারিংয়ে জড়িয়ে পড়া নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে তোলপাড়।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া স্মিথ ও ওয়ার্নারকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। আর বেনক্রফটকে নয় মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। একই ঘটনায় অজি কোচ ড্যারেন লেহম্যানও অল্প কিছুক্ষণ আগে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
আচ্ছা ভাবুনতো একবার, বাংলাদেশের কোন টেস্ট ক্যাপ্টেন বা পেসার যদি জয়ের তাগিদে বল বানানোর মত অনৈতিক কাজ করেন, তাহলে তার কি হবে? অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড যে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে, শাস্তিটা কি তেমনই হবে? নাকি কম হবে? নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে।
তাহলে শুনুন, বল টেম্পারিংয়ের মত এমন সাড়া জাগানো ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সোজা সাপটা জানিয়ে দিলেন, বাংলাদেশের কেউ অমন কাজ করলে তার শাস্তি হবে কঠিন ও ভয়াবহ।
আজ দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিডিয়া ক্রিকেটের উদ্বোধন করতে গিয়ে পাপন বলেন, ‘ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া যে শাস্তি দিয়েছে, সেটা ঠিকই আছে। তা নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। শাস্তির মাত্রা মনে হয় ঠিকই আছে। ’ তবে পাপন মনে করেন, সে তুলনায় আইসিসির শাস্তি (এক ম্যাচ সাসপেন্ড ) কম হয়ে গেছে। এ বিষয়ে বিসিবি সভাপতির বক্তব্য, ‘আইসিসি যে শাস্তি দিয়েছে, আমার মনে হয় তা কম হয়ে গেছে।’
আচ্ছা, বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার যদি অমন কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েন, তার কি হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে পাপন নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়ে ওঠেন, ‘তার জন্য শাস্তি হবে ভয়াবহ আর কঠিন। তাকে আরও বড় শাস্তি ভোগ করতে হবে।’ এর বাইরে পাপন আরও দুটি তাৎপর্য্যপূর্ণ কথা বলেন। তিনি জানান, এই বল টেম্পারিং ইস্যুতে আইসিসির শাস্তি নিয়ে তিনি আইসিসির পরবর্তী সভায় আলোচনা করবেন এবং শাস্তির মাত্রা বাড়ানোর প্রস্তাব দেবেন।
এছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বল টেম্পারিং থেকে সতর্ক থাকার জোর তাগিদও দিয়েছেন বিসিবি বিগ বস। তিনি বল টেম্পারিং নিয়ে বোর্ডের একটা সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরির প্রয়োজন ও গুরুত্ব অনুভব করছেন। তাইতো বোর্ডের পরবর্তী সভায় বল টেম্পারিং ইস্যু উত্থাপন এবং এ সম্পর্কে পরিষ্কার নীতিমালা ও কঠোর আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করছেন।
পুরো বিষয়টিকে দুঃখজনক অভিহিত করে বিসিবি সভাপতি বলেন, ঘটনাটি সত্যিই দুঃখজনক। পাপনের ধারণা, বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও একটু আধটু বল টেম্পারিং হয়। সেটা যাতে আর বড় না হয়, কেউ প্রকাশ্যে বল বানাতে না পারে কিংবা বানানোর চেষ্টা না করে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবার কথাও বলেন পাপন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top