জাহিদুল ইসলাম, জবি প্রতিনিধি : ঢাকায় পৌষ সংক্রান্তির এই দিনকে বলা হয় সাকরাইন। ঢাকাই ভাষায় ‘হাকরাইন’। আদি ঢাকাই লোকদের পিঠাপুলি খাবার উপলক্ষ আর সাথে ঘুড়ি উড়াবার প্রতিযোগীতার দিন। সাকরাইন একান্তই ঢাকার, যুগের পরিক্রমায় তাদের নিজস্ব উৎসব।
চৌদ্দ জানুয়ারী (১৪ জানুয়ারি) পৌষ মাসের শেষ দিন। পৌষ সংক্রান্তি (Poush Sangkranti) এর এই দিনই পালিত হয় পুরান ঢাকার এবং আদি ঢাকাইয়াদের ঐতিহ্যের সাকরাইন উৎসব (Shakrain festival)।
চৌদ্দ জানুয়ারী পুরান ঢাকার আকাশ জুড়ে সাতরঙা বাহারি ঘুড়িদের আনাগোনা । পুরান ঢাকার বাহান্ন রাস্তা তেপান্ন গলির অধিকাংশ গলিতে আর খোলা ছাদে চলছে সুতা মাঞ্জা দেওয়ার ধুম। রোদে সুতা শুকানোর কাজও চলছে পুরোদমে। তাই শীতের উদাস দুপুর আর নরম বিকালে আকাশে গোত্তা খাচ্ছে নানান রঙের ঘুড়ি। ঘুড়িতে ঘুড়িতে হৃদ্যতামূলক কাটা-কাটি খেলাও চলছে। অহরহ কাটা-কাটি খেলায় হেরে যাওয়া অভিমানী ঘুড়ি সুতার বাধন ছিড়ে উড়ে যাচ্ছে দূর বহুদূরব্যাপী।
ভোরবেলা কুয়াশার আবছায়াতেই ছাদে ছাদে শুরু হয়েছে ঘুড়ি ওড়ানোর উন্মাদনা। ছোট বড় সকলের অংশগ্রহনে মুখরিত ছিল প্রতিটি ছাদ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়বে উৎসবের জৌলুস। আর শীতের বিকেলে ঘুড়ির কাটা-কাটি খেলায় উত্তাপ ছড়ায় সাকরাইন উৎসবে। আকাশে উড়ছে ঘুড়ি আর বাতাসে দোলা জাগাবে গান। মাঝে মাঝে ঘুড়ি কেটে গেলে পরাজিত ঘুড়ির উদ্ধেশ্যে ধ্বনিত হয় ভাকাট্টা লোট শব্দ যুগল।
সাকরাইন শুধু ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব নয়। পুরান ঢাকার ঘরে ঘরে চলে মুড়ির মোয়া, ভেজা বাখরখানি আর পিঠা বানানোর ধুম। এ দিন পুরনো ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, দয়াগঞ্জ, মুরগীটোলা, কাগজিটোলা, গেন্ডারিয়া, বাংলাবাজার, ধূপখোলা মাঠ, সদরঘাট, কোটকাচারী এলাকার মানুষ সারাদিন ব্যাপি ঘুড়ি উড়ায়, খাবার এর আয়োজন করে, সন্ধ্যা আগুন নিয়ে খেলে আর ফায়ারওয়ার্ক্স তো চলছে । সন্ধ্যা থেকে ফায়ারওয়ার্ক্সের লাল নীল আলোয় আলোকিত সাজে পুরানো ঢাকা।