ক্রীড়া প্রতিবেদক : প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা কাপে ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ। ইতিপুর্বে তিনবার ফেডারেশন কাপের ফাইনালে খেলেছিল। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন দেখা মেলেনি। অবশেষে ঘরোয়া ফুটবলে দীর্ঘ ৬০ বছরের পথ চলায় সব থেকে বড় সাফল্য পেল আরামবাগ। শনিবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া খেলার প্রথমার্ধের ১৮ মিনিটে ফ্রি কিক পায় চট্টগ্রাম আবাহনী। বা প্রান্ত থেকে মিডফিল্ডার আব্দুল্লাহর স্পটকিক পোস্টেও অনেক উপর দিয়ে চলে যায়। পরের মিনিটেই আরামবাগ গ্যালারীতে উল্লাস। ডান প্রান্ত থেকে শাহরিয়ার বাপ্পির ক্রসে বক্সে বল পেয়ে লাফিয়ে উঠে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন ডিফেন্ডার আরিফ ১-০। ৪৫ মিনিটে বা প্রান্ত থেকে আবু সুফিয়ান সুফিলের বাড়িয়ে দেয়া বল বুঝে নেন ফরোয়ার্ড জুয়েলের ক্রস ডান পায়ের জোড়ালো শটে বল জালে পাঠান ডিফেন্ডার রকি ২-০। বিরতির পর আর উভয় দলই একাধিক সুযোগ পেয়েছিল গোলের। তবে কাজে লাগাতে পারেনি। তাই শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়ে আরামবাগের খেলোয়াড়রা। এবারের টুর্নামেন্টে শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলেছে আরামবাগ। চট্টগ্রাম আবাহনী ও আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ডি গ্রুপে ছিল। প্রথম দেখায় ১-১ গোলে ড্র করেছিল তারা। শেষ পর্যন্ত ফাইনালে খেলে তারাই। এ যাত্রায় বন্দরনগরীরর দলটিকে বড় ব্যাবধানে হারায় আরামবাগ। কোয়ার্টার ফাইনালে ঢাকা আবাহনী ও সেমিফাইনালে শেখ জামালের মতো শক্তিশালী ক্লাবকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ। এর আগে মাত্র তিনবার ফাইনাল খেলেছে তারা। সেটি ছিল ফেডারেশন কাপে। তবে এবার আর হতাশ হতে হয়নি আরামবাগকে। চ্যাম্পিয়ন হয়েই ঘরে ফিরেছে তারা। এই জয়ে খেলোয়াড়দের জন্য ১০ লাখ টাকা বোনাস ঘোষণা করে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি একেএম মুমিনুল হক সাঈদ। খেলা শেষে চ্যাম্পিয়ন আরামবাগকে ৫ লাখ ও রানার্সআপ চট্টগ্রাম আবাহানীকে ৩ লাখ টাকা প্রাইজমানি প্রদান করা হয়েছে। ফাইনালে ও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়-এর পুরষ্কার পেয়েছেন মোহাম্মাদ আরিফ। ফেয়ার প্লে ট্রফি পেয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রুপের পক্ষ থেকে ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় আরামবাগের মো. আরিফকে ১টি ওয়ালটন ফ্রিজ ও একটি ওয়ালটন ২৮ ইঞ্চি এলইডি টিভি এবং টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা মো. জুয়েলকে (৩ গোল) একটি ওয়ালটন ২৮ ইঞ্চি এলইডি টিভি দিয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে। ফাইনাল শেষে পুরস্কার বিতরণ করেন বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, ওয়ালটন গ্রুপের অপারেটিভ ডিরেক্টর এফএম ইকবাল বিন আনোয়ার (ডন), আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি একেএম মুমিনুল হক সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগসহ অন্যান্যরা। পাশাপাশি এই টুর্নামেন্টের কাভারেজ দেওয়ার উপর ভিত্তি করে বাফুফের নির্বাচিত সাতটি মিডিয়া হাউজকে ৩টি প্রিন্ট মিডিয়া, ২টি ইলেকট্রনিক মিডিয়া, ১টি অনলাইন ও একজন ফটোগ্রাফারকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। দেশের ফুটবলে তেমন সাফল্য না থাকলেও আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ বেশ পুরনো দল। ১৯৫৮ সালে সেই তাদের জন্ম। প্রতিষ্ঠার পরেই তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লিগে নাম এন্ট্রি করে আরামবাগ। ১৯৬৯ সালে তারা দ্বিতীয় বিভাগে ওঠে। তারপর থেকে আরামবাগ ক্লাবকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শুধুই এগিয়ে যাওয়ার পালা। ১৯৭৯ সালে প্রথম বিভাগ লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। প্রিমিয়ার বিভাগ লিগ শুরু হওয়ার পর থেকে আরামবাগ ক্লাব প্রায় প্রতি বছরই খেলেছে। পয়েন্ট টেবিলে বরাবরই চতুর্থ কিংবা পঞ্চম স্থানের বাইরে তারা কখনও যায়নি। ফেডারেশন কাপ ফুটবলে তিনবার রানার্সআপ হয়েছে আরামবাগ ১৯৯৭, ২০০১ ও ২০১৬। তাদের বড় শিরোপা জয় তিনটি, প্রতিটিই বিদেশে ১৯৯৫ ও ২০০১ সালে সিকিম গভর্নস কাপ এবং ২০০১ সালে ভুটানে প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে চ্যাম্পিয়ন। এছাড়া রানার্সআপ হয় ১৯৮১ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত আনফা কাপ, ১৯৯৭ সালে সিকিমে অনুষ্ঠিত চিফ মিনিস্টার গোল্ডকাপ এবং ভারতে অনুষ্ঠিত নাগজি গোল্ডকাপেও।
