হাসান শিপলু, কক্সবাজার থেকে
গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। শনিবার ঘটনার পর নেতাদের কাছ থেকে হামলার বর্ণনা শুনে অবাক হন। এ পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল কক্সবাজার সফরের দ্বিতীয় দিনে পথে পথে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন। পথে লোক সমাগম দেখে অভিভূত হন তিনি।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে খালেদা জিয়ার এই মনোভাবের কথা জানা গেছে। রাতে এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আমাদের সময়কে বলেন, এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার কথা শুনে বেগম জিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি ঘটনার নিন্দা জানান। রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রমে যাওয়ার পথে এ ধরনের হামলা হীন উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস বলেন, হামলার খবর শোনার পর খালেদা জিয়া দারুণভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
খালেদা জিয়ার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, হামলা কিংবা বাধার উদ্দেশ্য একটাই, তা হলো খালেদা জিয়াকে জনগণের কাছে যেতে বাধা দেওয়া। তার পরও তিনি অনড়। জনগণের ভালোবাসাই তার পাথেয়। সেই মনোবল নিয়েই তিনি সব বাধা উপেক্ষা করে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখতে উখিয়া যাবেন।
কক্সবাজারের উদ্দেশে বেলা ১২টা ২০ মিনিট চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস থেকে রওনা হন। সার্কিট হাউসের গেট থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী তাকে অভ্যর্থনা জানান। নগরীর নিউমার্কেট থেকে কর্ণফুলী ব্রিজ পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য ছিল। শহর পার হতেই এক ঘণ্টা পার হয়ে যায়। নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেলে রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার পৌঁছান। আজ সকালে তিনি উখিয়ার বালুখালী-২, ময়নারগোনা চারটি রোহিঙ্গাশিবির পরিদর্শন ও তাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করবেন। সেখানে ড্যাবের মেডিক্যাল ক্যাম্পও পরিদর্শন করবেন।
সর্বশেষ ২০১২ সালের ?জুন মাসে কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধপল্লীতে হামলা ও ভাঙচুরের পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে কক্সবাজারে যান খালেদা জিয়া। তখনো তিনি ঢাকা থেকে সড়কপথে প্রথমে চট্টগ্রাম এবং পরে সেখান থেকে কক্সবাজার যান।
রবিবার সকালে আহত সাংবাদিকদের দেখতে চট্টগ্রামের একটি হোটেলে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, হামলাকারীরা চিহ্নিত। তারা ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী। পত্রিকায় তাদের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।
সন্ধ্যায় কক্সবাজার পৌঁছলে সার্কিট হাউসে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, জেলা সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা স্বপ্না, সাবেক সাংসদ লুৎফর রহমান কাজল, সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদসহ জেলার নেতারা তাকে অভ্যর্থনা জানান। কক্সবাজার প্রবেশপথ থেকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে শোভাযাত্রা সহকারে নেতাকর্মীরা সার্কিট হাউসে নিয়ে আসেন।
ব্যাপক শোডাউন : চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের ১৭০ কিলোমিটারের পথে পথে অর্থাৎ কর্ণফুলী ব্রিজ, বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, রামু প্রভৃতি স্থানে হাজার হাজার নেতাকর্মী রাস্তার দুধারে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে মুহুর্মুহু করতালি ও সেøাগান দিয়ে তাদের নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
কর্ণফুলীর সেতুর কাছে দক্ষিণ জেলা সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কর্ণফুলী ব্রিজসংলগ্ন পুরাতন ফিশারিজ মার্কেট সড়কে চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, ফিরিঙ্গি বাজারে স্থানীয় নেতা শামসুল আলম ও এরশাদ উল্লাহ এবং বোয়ালখালীতে সাবেক সাংসদ সারোয়ার জামাল নিজাম, সাতকানিয়ায় মজিবুর রহমান, চন্দনাইশে মহসিন জিল্লুর, মঞ্জুর আলম তালুকদার, মিজানুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে নেতাকর্মী-সমর্থকরা বিশাল শোডাউন করেন। এসব স্থান দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহর এগিয়ে নিতে নিরাপত্তাকর্মীদের বেশ বেগ পেতে হয়।
পটিয়ার দুটি হাতিকে সাজিয়ে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানান চট্টগ্রাম জেলা দক্ষিণের সহসভাপতি এনামুল হক এনামসহ নেতাকর্মীরা। এর পর পটিয়া বাজারে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েলসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীর মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে তাদের নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
বান্দরবান থেকে আসা উপজাতীয় নারীরাও সাতকানিয়ার কেরানীহাটের আগে মিসেস সা চিং পুরো জেরি ও চকরিয়ার লামাবাজারে জেলা সভাপতি ম্যা মা চিং ও সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজার নেতৃত্বে বান্দরবানের উপজাতীয় নেতাকর্মীরা রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানান।
ভারতে চিকিৎসাধীন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের পক্ষ থেকে চকরিয়া পৌরসভা সড়ক ও আজিজনগরে নেতাকর্মীরা দুই পাশে দাঁড়িয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানান।
কক্সবাজার আসার পথে লোহাগাড়ায় খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ির টায়ার পাংচার হয়। পরে তা মেরামত করে তিনি আবার যাত্রা করেন।