ডেস্ক রিপোর্ট: বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ‘ঝড়-তুফান তুলেছিলেন’ মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আল্লাহর বিশেষ রহমতে বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের সেই দীর্ঘ টানাপোড়েনের অবসান হয়েছে।
সরকারের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধিমালার যে খসড়া সুপ্রিমকোর্টে জমা দেয়া হয়েছিল, গত ৩০ জুলাই তা গ্রহণ না করে কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। তবে সংবিধান অনুযায়ী ওই খসড়া তৈরি রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার ও তার নির্দেশনাতেই করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন আইনমন্ত্রী।
শনিবার রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন-২০১৭’ এর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, “তারপর এ নিয়ে সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি মহোদয় যে ঝড়-তুফান তুলেছিলেন তা আপনাদের সকলেরই জানা আছে। মনে হচ্ছিল আমার মন্ত্রণালয়ের সচিবের মত আমাকেও কখন যেন আদালত তলব করে কাঠগড়ায় দাঁড় করান। তাকে কোনোভাবেই বোঝানো যাচ্ছিল না, এটা মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ক্ষমতা। এ ক্ষমতা আইন মন্ত্রণালয় প্রধান বিচারপতিকে দিতে পারে না। যাই হোক, আল্লাহর বিশেষ রহমতে সেই অবস্থার অবসান হয়েছে।”
বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর সুপ্রিমকোর্টে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের জমা দেয়া বিধিমালার খসড়া গ্রহণ না করে বিচারপতি সিনহা মতপার্থক্য নিরসনে মন্ত্রীসহ অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইন মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় ডেকেছিলেন। কিন্তু আইনমন্ত্রী সে সময় সুপ্রিমকোর্টে না যাওয়ায় এ নিয়েও গত ২০ অগাস্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ওই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের উপস্থিতিতে সংবিধান অনুযায়ী বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়নে রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার ও যে খসড়াটি সুপ্রিমকোর্ট পাঠানো হয়েছিল তার প্রক্রিয়া তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী।
আনিসুল হক বলেন, “অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলতে চাই, রাষ্ট্রের ওয়ারেন্স অব প্রিসিডেন্সে রাষ্ট্রপতির অবস্থান এক নম্বর। সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে কারও সাথে পরামর্শ ছাড়াই তিনি প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন। সরকারের সকল নির্বাহী ব্যবস্থা রাষ্ট্রপতির নামে গৃহীত হয়। সংবিধানের ৫৫ (৬) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তিনি সরকারে কার্যাবলী পরিচালনার জন্য বিধি সমূহ প্রণয়ন করেন। সেই ক্ষমতাবলে তিনি রুলস অব বিজনেস-১৯৯৬ প্রণয়ন করেছেন।”
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১১৫ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করেন, তাদের নিয়োগ দেন। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে তাকে শৃঙ্খলা বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। যিনি বিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করেন, বিচারকদের নিয়োগ দেন তিনিই তাদের শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়ন করবেন- এটাই স্বাভাবিক এবং আইন ও বিচার বিভাগ রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা, সিদ্ধান্তক্রমে অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরি আচরণ ও শৃঙ্খলা বিধির খসড়া প্রণয়ন করে। পরে তা বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টে পাঠায়।”
শৃঙ্খলাবিধির সেই খসড়া নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর দেশ ছাড়ার পর ছুটি শেষে ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
এরপর বিচারকদের চাকরিবিধির এ বিষয়টি গত ৮ অক্টোবর আপিল বিভাগে উঠলে সে সময় ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।
৫ নভেম্বর বিষয়টি আদালতে এলে অ্যাটর্নি জেনারেল আবারও সময়ের আবেদন করেন। শুনানি শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করেন।
আর টানাপোড়েনের অবসানে চলতি সপ্তাহেই শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশ করা হবে বলে জানান আইনমন্ত্রী।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহাহবাব মিয়ার সভাপতিত্বে বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক। আর এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।