নিজস্ব প্রতিবেদক: নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধিতে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ক্ষুণ্ন হয়নি বরং বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সোমবার রাতে ‘বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা, ২০১৭’ এর গেজেট প্রকাশের পর সমালোচনার মুখে আইনমন্ত্রী এ মন্তব্য করলেন। বিধিমালার সমালোচনা করে বলা হচ্ছে, এই বিধিমালার মাধ্যমে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনকে রাষ্ট্রপতি নয়, সরকার আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে গেছে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘উচ্চ আদালতের সঙ্গে আলাপ-আলাচনা করেই এটা (বিধিমালা) করেছি। সুপ্রিম কোর্টও বলবে না যে, ইয়ে করা হয়নি। আপিল বিভাগের সব বিচারপতির সঙ্গে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারা যখন এটা অ্যাপ্রুভ করেছেন, তখন আমরা এগ্রি করেছি।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে পরিষ্কার করে বলা আছে, এই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে থাকবে। তিনি সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে আচরণ বিধি তৈরি করবেন। তিনি সব ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। আমরা যে আচরণ বিধি করেছি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদকে শিরোধার্য মনে করে সেটাকে রক্ষা করার জন্য যা যা করণীয় এখানে করেছি। এখানে রুল-২৯ এ পরিষ্কার করে বলা আছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সংবিধান অনুযায়ী কাজ করব, পরিষ্কার কথা। আমার এখন পর্যন্ত মনে হয় না যে সংবিধানের বাইরে আমরা কোনো কাজ করছি।’ ‘জুডিশিয়ারির জন্য যেখানে স্পেশাল প্রভিশন রাখার দরকার সেখানে রুল করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমার মনে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা কোথাও ক্ষুণ্ন করা হয়নি বরং একটু বাড়ানো হয়েছে।’
বিএনপি বলছে, বিধিমালায় বিচারকদের পদোন্নতি ও বদলির বিষয় এমনভাবে রাখা হয়েছে যে তারা স্বাধীনভাবে বিচার করতে পারবেন না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘আশঙ্কা নেই। সংবিধানে বলা আছে রাষ্ট্রপতি যখন জুডিশিয়ারির ব্যাপারে কোনো কাজ করেন তিনি আইন মন্ত্রণালয়টাকে তার সেক্রেটারিয়েট হিসেবে ব্যবহার করেন। সেই ক্ষেত্রে আমরা তার কাছে নথি চালাচালির জন্য একটা অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হই।’ ‘সেই ক্ষেত্রে কিন্তু পরামর্শের কথা বলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ। যেখানে রাষ্ট্রপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শের মধ্যে ভিন্নতা থাকবে, সেই ভিন্নতা থাকলে সুপ্রিম কোর্টের যে পরামর্শ সেটা প্রাধান্য পাবে। সেই ক্ষেত্রে আমরা তো সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা খর্ব করিনি। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে আমরা সব সময়ই বাংলাদেশ সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ আমাদের গাইডলাইন হিসেবে গ্রহণ করেছি। তার কারণ হচ্ছে বলাই আছে বাংলাদেশের সংবিধান হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন।’
তবে বিধিমালা নিয়ে কেন সমালোচনা হচ্ছে, জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, ‘শোনেন, তারা কেন (সমালোচনা) করছেন, দুই-তিনটা জিনিস তাদের। সেটা হচ্ছে তারা বুঝুক আর না বুঝুক সমালোচনার জন্য তাদের সমালোচনা করতে হবে। তাদের যে ওয়াইডার পরিকল্পনা ছিল তা অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন খড়কুটো ধরে তারা সমালোচনা করছেন।’ ‘তাদেরকে আমি এটুকুই বলব- দ্যাখেন, কনস্ট্রাকটিভ ক্রিটিসিজম (গঠনমূলক সমালোচনা) গ্রহণ করতে আমাদের কোনো আপত্তি নাই। কনস্ট্রাকটিভ ক্রিটিসিমজ গ্রহণ করার জন্য উনাদেরকে পড়াশোনা করতে হবে। আমি উনাদেরকে বলব আপনারা সংবিধান দ্যাখেন।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটা কথা পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই- উনাদের ইচ্ছা মত, উনারা যে রকম ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু করে ৯৬ সাল পর্যন্ত কনস্টিটিউশন (সংবিধান) নিয়ে ফুটবল খেলেছেন, আমরা এই কনস্টিটিউশনকে নিয়ে আর ফুটবল খেলতে দিব না।’
পদত্যাগ করা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কারণে শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়নে দেরি হওয়ার কথা বলছেন, তিনি কীভাবে বাধা দিয়েছিলেন- জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, ‘যেসব জিনিস চলে গেছে আমি এগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই না।’