শুভ দেব চাকমা : নারী ও পুরুষের সম-অধিকার সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী নিপীড়ন নির্যাতনে অবসান ঘটিয়ে নারীদের উপর যৌননিপীড়ন নির্যাতন ও সহিংসতা বন্ধের অঙ্গীকার নিয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ৩৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হতে যাচ্ছে।
সত্তর দশকে জাতিগত নিপীড়ন, পারিবারিক দাসত্ব ও বঞ্জনার বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির নেতৃত্বে জুম্ম নারী মুক্তি আন্দোলন শুরু হয়। উত্তাল দশকে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলন চলাকালীন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের উপর শাসক গোষ্ঠীর দমন -পীড়নের পাশাপাশি জম্ম নারীর উপর নির্যাতন – নিপীড়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সমাজকে সচেতন করে তোলে। ফলে জম্ম নারীদের উপর নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলনে জুম্ম ছাত্রী সমাজকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ১৯৮৮ সালের ৮ মার্চ ছাত্রী সংগঠন ” হিল উইমেন্স ফেডারেশন ” গঠিত হয়। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পর থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীদের ক্ষেত্রবিশেষে অধিক অবদান থাকলে ও আমাদের দেশে নারী সমাজ জাতিগত, ভাষাগত সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। অথচ সংবিধানে ২৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে- কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ- নারী- পুরুষ নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না। সংবিধানে এই ধারাটি বাস্তবায়িত হলে সমাজে নারীর সমঅধিকার ও সমমর্যাদা নিশ্চিত করা যেত। উক্ত ধারাটি বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এখন ও শোষণ -বঞ্চনা, অবহেলা, নিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার হয়ে চলেছে আদিবাসী নারীরা। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের ২০১৯ সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪৫ শতাংশের ও বেশি কর্মক্ষেত্রে সংহিতার শিকার হয়েছে।এদের মধ্যে ৬১ শতাংশ জানিয়েছেন যে তারা বাজারে এলাকায়, ৪৫ শতাংশ মাঠে,৬ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ৩ শতাংশ কর্মস্থলে সহিংসতা সম্মুখীন হয়েছেন। আবার ৩৩ শতাংশ নারী শারীরিক নির্যাতন, ৩৮ শতাংশ মানবিক নির্যাতন, ১৯ শতাংশ অর্থনৈতিক নিপীড়ন এবং ৫ শতাংশ যৌন নির্যাতনে শিকার হয়েছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে এমন তা হচ্ছে বলে মনে করেন সাবেক সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি শ্রী: উষাতন তালুকদার নারী পুরুষের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠাকল্পে ডিজিটাল নীতি, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ব্যবহার ও দক্ষতা অপরিহার্য। পার্বত্য চট্টগ্রামে এহেন অনিশ্চিত ও নাজুক পরিস্থিতিতে সমঅধিকার সমমর্যাদা নিশ্চিতকল্পে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।