শুভ দেব চাকমা: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ রোজ সোমবার, বিকাল ৩:০০ ঘটিকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার উদ্যোগে বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে এক মারমা নারীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষক কায়সারকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে যথাযথ শাস্তির দাবীতে রাঙ্গামাটি ডিসি অফিসের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিসিপি, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক টিকেল চাকমার সঞ্চালনায় ও পিসিপি, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে সংহতি বক্তব্য রাখেন রাঙ্গামাটি জেলা জর্জ কোর্টের এডভোকেট সুষ্মিতা চাকমা; পিসিপি, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি থোয়াইক্যজাই চাক; পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশন, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি ম্রানুচিং মারমা। মানববন্ধনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রনেল চাকমা।
সংহতি বক্তব্যে এডভোকেট সুষ্মিতা চাকমা বলেন, আমাদের দেশে বিশেষ করে কিশোরী ও তরুণীরা একের পর এক ধর্ষণ, জুলুম ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। পাহাড়ের নারীরাও তার ব্যতিক্রম নয়। পাহাড়ের নারীরা শিক্ষাক্ষেত্রে, অর্থনৈতিকক্ষেত্রে সহ সকল ক্ষেত্রে দুর্বল হওয়ার কারণে তারা সবসময় ধর্ষণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। এক্ষেত্রে নির্যাতনকারীরা সবসময় সবল হয়, সবসময় ক্ষমতাবান হয়ে তাকে। যারা ক্ষমতাশালী, তারা সবসময় দূষ্কৃতিকারীদের সহযোগিতা করে এবং করে থাকে। যার কারণে অপরাধীরা বারবার এগুলো করার সাহস পাচ্ছে। এযাবতকালে যতগুলো ধর্ষণের ঘটনা হয়েছে তার মধ্যে কিছু অপরাধের বিচার হলেও অধিকাংশ নারী এখনো যথাযথ বিচার পায়নি। তিনি আরো বলেন, দেশে অন্যান্য জেলার মতো তিন পার্বত্য জেলাতেও বিশেষ নারী ও শিশু ট্রাইবুনাল গঠন হওয়ার কারনে আজ অনেক ঘটনার বিচার সম্ভব হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য একটি সুখবর। আজকে সমাজে তথা দেশে নারীর প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি সেটা পরিবর্তন হওয়া দরকার।
তিনি আরও বলেন, লামায় এলাকাবাসীরা পিটুনি দিয়ে ধর্ষক কায়সারকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। এরপরও কিভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করে হাসপাতাল থেকে অপরাধী ধর্ষক কায়সার পালিয়ে গেল তিনি প্রশাসনের কাছে এর জবাব চান। আমাদের চৌকস পুলিশ বাহিনী রয়েছে। এখানে সেনা-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা আন্তরিক থাকলে অপরাধীকে ধরা, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা কঠিন কিছু নয়। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে দুষ্কৃতিকারীরা উৎসাহ পাবে। এরকম চলতে থাকলে আমরা কেউই নিরাপদে থাকতে পারবো না। তিনি অবিলম্বে ধর্ষক কায়সারকে গ্রেফতার করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা বলেন, আজ পার্বত্য চট্টগ্রামে একের পর এক পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণ করা হচ্ছে, ধর্ষণের পর হত্যা করা হচ্ছে। কিন্ত কোনো সুবিচার পাচ্ছি না। ধর্ষণকারীকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। যেখানে জনমানুষের সমস্যা হবে সেখানে সকাল বিকাল ছুটে যাওয়া জনপ্রতিনিধির কাজ। কিন্তু লামার ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান ধর্ষককারীর পক্ষে নিয়ে ধর্ষককে সহযোগিতা করে আসছে। এটাতো মেনে নেওয়া যায় না। তিনি অবিলম্বে ধর্ষক কায়সারকে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের দাবি জানান এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি থোয়াইক্যজাই চাক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের আয়তনের বাইরে নয়। প্রতিবারই ধর্ষণের মতো ঘটনায় আমরা রাজপথে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছি। আজও দাঁড়িয়েছি। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি হানাদারদের কর্তৃক ৩০ লক্ষ অসংখ্য মা বোনের ইজ্জতের পাওয়া আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে কেন আমার বোন নিরাপদে থাকবে না? কেন তারা ঘরের ভেতর ও বাইরে অনিরাপদ থাকবে? কেন তারা ধর্ষণের শিকার হবে?
তিনি আরও বলেন, গত শুক্রবারে বান্দরবানের লামায় হয়ে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনায় সেখানকার ওয়ার্ড মেম্বার ও ইউপি চেয়ারম্যান অপরাধীকে সহযোগিতা করেছে এবং ভুক্তভোগীকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল হাসপাতাল থেকে ধর্ষক কায়সার পালিয়ে গেছে। আজকে পাহাড়ে যত ধর্ষণের ঘটনা হয়েছে, যত অপরাধের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে এইখানে যতগুলো দল রয়েছে, সেই দলগুলো সেসব ঘটনার কোনো প্রতিবাদ আজ পর্যন্ত করেনি। ধর্ষকের কোনো জাত-পাত নেই। তাদের একটাই পরিচয়, তারা ধর্ষক। সুতরাং সবার উচিত ধর্ষণের মতো ঘটনার প্রতিবাদ কর। যতক্ষন না পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আইনের কোনো সুশাসন এখানে প্রতিষ্ঠিত হবে না। তিনি অবিলম্বে ধর্ষক কায়সারকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি ম্রানু সিং মারমা বলেন, বান্দরবান জেলাধীন লামা উপজেলায় এক মারমা নারী দিনে দুপুরে নিজ এলাকায় ঘরের পাশে তরকারি খুঁজতে গিয়ে যদি সেটেলার কায়সার কর্তৃক ধর্ষনের শিকার হতে হয়, তাহলে আজকে পাহাড়ি নারীর নিরাপত্তা কোথায়? ধর্ষক কায়সারকে পালানোর সহযোগিতা যারা করেছে সেই ইউপি চেয়ারম্যান তিনিও ধর্ষকের সমান অপরাধী। তাকেও ধর্ষকের সাথে শাস্তির আওতায় আনা হোক এবং ধর্ষক কায়সারকে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক বলে জানান বক্তারা