নিজস্ব প্রতিবেদক: যে কোন বিবেচনাতেই নৌ-মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। নদীমাতৃক বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের যাতাযাতের প্রধান বাহনই হচ্ছে লঞ্চ-ফেরী। নৌ-মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিআইডব্লিউটিসি এই ফেরীগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। প্রতিবছরই বর্ষা মওসুমে এই সংস্থার অধীনে ফেরীগুলো মেরামত করা হয়। আর এই মেরামত নিয়ে চলে তুঘলকি কাণ্ড। ৯ টাকার টেণ্ডার হয় ৯শ টাকা। বিআইডব্লিউটিসির অধিকাংশ কর্মকর্তাই এই দুর্নীতির সাথে জড়িত। এ নিয়ে দৈনিক আজকের প্রভাত-এ বেশ কয়েকবার প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। জানা যায়, বিএনপি-জামাত সমর্থিত লোকজন দিয়েই চলছে এই প্রতিষ্ঠান। যদিও এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের সহায়ক শক্তি শাজাহান খান। তার মতো একজন দক্ষ ও বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হবার পরেও জামাত-বিএনপির লোকজন কিভাবে এই মন্ত্রণালয়ে জোঁকের মতো বসে দুর্নীতি করে যাচ্ছে তা অনেকের কাছে বিস্ময়। এই জামাত-বিএনপি চক্র সরকারের অর্জনকে ম্লান করার জন্য নানাবিধ চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে। তাদেরকে এখন দমন করা না গেলে বিপাকে পড়বে সরকার। ম্লান হবে সরকারের অর্জন। তাই বিআইব্লিউটিসি থেকে জামাত-বিএনপি চক্রকে বিতাড়িত করা এখন সময়ের দাবি।
জানা যায়, বিআইডব্লিউটিসিতে পপুলার শ্যাফ্ট কেনার নামে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেবার আয়োজন সম্পন্ন। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মফিজুল হক, চীফ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রহিম তালুকদার ও ডিজিএম এস এম মোতাহার হোসেনের নেতৃত্বে শক্তিশালী এই সিন্ডিকেট নৌ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না নিয়ে উল্লেখিত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিআইডব্লিউটিসি’র এই দুর্নীতিপরায়ণ সিন্ডিকেটটি ফেরী পুনর্বাসনের নামেও সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট করছে। মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণীর অসৎ কর্মকর্তা এহেন দুর্নীতি অনিয়মের কাজে নেপথ্যে থেকে তাদের সায় দিয়ে থাকেন। যার জন্য বছরের পর বছর ফেরী সেক্টরের জরুরিভিত্তিতে স্পেয়ার পার্টস কেনার অজুহাতে এ ধরনের দুর্নীতি করে তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন। তারা বলে বেড়ান নৌমন্ত্রী আমাদের কিছু বলবে না। তার সাঙ্গপাঙ্গদের ম্যানেজ করেই প্রতি বছরই চলছে ভয়াবহ দুর্নীতি।
সূত্র জানায়, ফেরীর জরুরি যন্ত্রাংশের মধ্যে পপুলার শ্যাফ্ট হার্বস, স্লাইডিং ব্লক ও পিচ কনটো রড কেনার মধ্য দিয়ে এই দুর্নীতিপরায়ণ চক্রটি কোটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
গত জুলাই মাসের প্রথম ভাগে চীফ ইঞ্জিনিয়ার ও ডিজিএম-এর নেতৃত্বে এই চক্রটি কোরবানীর ঈদকে সামনে নিয়ে ১৫ কোটি টাকার একটি পরিকল্পনা চেয়ারম্যান দপ্তরে পেশ করে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে দীর্ঘ সময় লাগানোর অজুহাতে তড়িঘড়ি করে ২ থেকে ৩ কোটির টাকার পপুলার শ্যাফ্টসহ অন্যান্য যন্ত্র কিনে ওয়ার্কশপে পাঠিয়ে দিয়ে বাকি ১২ থেকে ১৩ কোটি টাকা তারা অনায়াসেই আত্মসাৎ করবে বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে ।
সূত্রটি জানায়, সরকারি প্রতিষ্ঠান বিটাক থেকে চাহিদানুযায়ী যন্ত্রাংশ না কিনে এই সিন্ডিকেট হাসান এন্টারপ্রাইজ, একেএমএস ফল্কু ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, মাসুদ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, ধোলাই খালের এই সকল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মগজ ধোলাই টেন্ডারের নামে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ কিনে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে। ফেরীতে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ পপুলার শ্যাফট বিদেশ থেকে কিনতে হলে এর মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ৫ কোটি টাকা। ধোলাই খাল থেকে তৈরি করে নিলে এর মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ৩ লাখ টাকা। ফেরী বহরে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ লাগানোর ফলে ফেরীর আয়ুষ্কাল কমে যাচ্ছে। ফেরী চালাতে ইঞ্জিন মাস্টারকে টেনশন নিয়ে চলতে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তি প্রকাশ্যে বলে বেড়ান নৌমন্ত্রীর বদন্যতায় তিনি বিআইডব্লিউটিএ’তে সদস্য প্রকৌশল হিসেবে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে এসে যোগদান করেছিলেন। তার বদান্যতায় এখন বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান পদ অলংকিত করেছেন।
‘অযোগ্য, দুর্নীতিপরায়ণ’ এই চেয়ারম্যান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময় চীফ ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রহিম তালুকদারের জুনিয়র ছিলেন। এই দুই প্রকৌশলীর লুটতরাজ এখন ওপেনসিক্রেট। এর মধ্যে জুটেছে ডিজিএম মোতাহার হোসেন। বিআইডব্লিউটিসিতে এই মোতাহার হোসেনের রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। প্রতিষ্ঠানে কোন শীর্ষ ব্যক্তি যোগদান করলেই কয়েকদিন পর দেখা যায়, তারা মোতাহার হোসেনের হাতের পুতুল হয়ে নিদ্বির্ধায় সব কাজ করে যাচ্ছে। এই মোতাহার হোসেন কোটি কোটি টাকার মালিক। সগর্বে বলে বেড়ান তিনি বিএনপি ঘরনার। তার মামা বিএনপি জোট সরকারের আরেক প্রতিমন্ত্রী টুকুর ভাগ্নে। তিনি বিআইডব্লিউটিসির অফিসার্স এসোসিয়েশনের শীর্ষ নেতাও বটে, যার জন্য তার কেশার্গ কেউ স্পর্শ করতে পারে না।
সূত্র জানায়, নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান মুক্তিযোদ্ধা হলেও বিআইডব্লিউটিসি’র গুরুত্বপূর্ণ সকল শীর্ষ পদে রয়েছে ‘বিএনপি-জামায়াতের’ কর্মকর্তারা। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে এরা নীলনকশা নিয়ে মাঠে নেমেছে।
সূত্র জানায়, ফেরী সেক্টর থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এরা আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে দুর্নীতির টাকার একটি অংশ সরকার বিরোধী আন্দোলনের নেতাদের পকেটে ঢেলে দেবে।
মাগুরা, ভোলা, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, পাটুরিয়া, দৌলতদিয়া নৌ-রুটে চলাচলকারী জলযানের ড্রাইভার মাস্টারগণ জানান. ফেরী সেক্টরে দুর্নীতি নতুন নয়। ঝড়, বৃষ্টি, তুফানকে সামনে নিয়ে আমরা রাতদিন যাত্রীসহ পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার করে থাকি। কিন্তু নিম্নমানের যন্ত্রাংশ দিয়ে ফেরীকে কৌশলে অচল করে দেয়া হচ্ছে। বিটাকের যন্ত্রাংশের কথা বললে চাকরি হারানোর ভয় দেখানো হয়। মুখে তালা দিয়ে অনেক কষ্ট ও যন্ত্রণার মধ্যে জেনেশুনে চাকরি করতে হচ্ছে। একজন ইঞ্জিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রহিম তালুকদার ও ডিজিএম মোতাহার হোসেন সংশ্লিষ্ট নৌপথে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছেন, ফেরীর যন্ত্রাংশের জন্য এবার আর ভাবতে হবে না। জরুরি যন্ত্রাংশ কিনে স্ব স্ব ওয়াকর্শপে পাঠানো হবে। তাদের এই উৎসাহী তৎপরতা দেখে জাহাজীরা মন্তব্য করছেন চাইলেই পাওয়া যায় না। ঘন্টার পর ঘন্টা ফেরী অলস হয়ে বসে থাকে। এখন বলা হচ্ছে সকল স্পেয়ার পার্টস কেনা হয়েছে এবং তা যথাযথস্থানে নিরাপদে আছে। এই জাহাজী কর্মকর্তারা বলেন, কোন কোন ফেরী সার্ভিসে আসার আগে বিকল হয়ে যায় এমনও ঘটনা অনেক সময় ঘটে।
কথিত বিএনপি-জামায়াতের এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকার বা সংশ্লিষ্ট মহল যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয় তবে লাভজনক এই সেক্টরটি ধ্বংসের দ্বারপ্রাপ্তে চলে যাবে বলে আশংকা অনেকের।