রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১

জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

editor
জানুয়ারি ১০, ২০২৪ ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

আজকের প্রভাত রিপোর্ট: পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে ফেরেন। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ (বুধবার)। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করবে আওয়ামী লীগ।
১০ জানুয়ারি মহান মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিক ইতিহাসের একটি বিশেষ মাইলফলক। ১৯৪৭ সালে ভ্রান্ত দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার মানুষকে নতুন করে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে। ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলে বাঙালি জাতি। বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ খ্যাত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের কালজয়ী নির্দেশনা ও আহ্বান এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয় বাঙালি জাতি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাঙালি জাতির নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে রাখে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে বাঙালি জাতি দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে। বিশ্ব-মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।
১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জিত হলেও বাঙালি জাতির বিজয়ের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখনও পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকায় অপূর্ণতার বিদগ্ধ-বিষাদে নিমজ্জিত ছিল সদ্য স্বাধীন ভূখণ্ডের আদিগন্ত আকাশ। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত-স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসার মাধ্যমে সে বিজয় পূর্ণতা লাভ করে। ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গুনতে গুনতে লন্ডন-দিল্লি হয়ে মুক্ত স্বাধীন স্বদেশের মাটিতে ফিরে আসেন বাঙালির ইতিহাসের বরপুত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এই দিন স্বাধীন বাংলার আকাশে সূর্যোদয়ের মতো চির ভাস্বর-উজ্জ্বল মহান নেতা ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফিরে আসেন তাঁর প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে। স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামলো তাঁর দু’চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস। জনগণনন্দিত শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তাঁর ঐতিহাসিক ধ্রুপদি বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালোবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি আসতে পারবো কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি—বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’
দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে বাঙালি জাতি যখন কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি তখন পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাঙালি জাতির হৃদয়ে প্রজ্বলিত করেছিল অনুপ্রেরণার দেদীপ্যমান আলোক শিখা। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করা হয়েছিল ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে’। সেই থেকে প্রতিবছর কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি নানা আয়োজনে পালন করে আসছে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।
কর্মসূচি: মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বরাবরের মতো এবারও নানা কর্মসূচি আয়োজন করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-
বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৬টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারা দেশে দলের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৮টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
এদিন আড়াইটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য দেশের প্রতিটি জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগ এবং সংগঠনের সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির অনুরূপ কর্মসূচির আয়োজন করবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কর্মসূচি পালনের জন্য আওয়ামী লীগসহ সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

Please follow and like us:

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial