বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই চলচ্চিত্রের ‘সুপারস্টার’ শাকিব খানের সঙ্গে তার বিয়ে ও ভালোবাসার সব কষ্ট একাকী বয়ে বেড়াচ্ছেন স্ত্রী অপু বিশ্বাস। জনপ্রিয় এই নায়িকা এটাও অনুভব করেন, শাকিবও ভালো নেই। কষ্টটা বরং শাকিবেরই বেশি। অপু তো দিন শেষে তবু কাছে পাচ্ছেন ছেলে জয়কে। শাকিব তো তাও পাচ্ছেন না। একাকিত্বই তার সঙ্গী এখন। আর এটা ভেবেও কষ্ট হয় অপুর। একই সঙ্গে নিয়তিকে মেনে নিয়ে শাকিব-পত্নী সবকিছু ছেড়ে দিয়েছেন আল্লাহর ওপর।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের বিনোদন বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান কিউট সাময়িকীতে এসব বলতে বলতে অঝোরে কাঁদলেন বাংলা চলচ্চিত্রের এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত নায়িকা অপু বিশ্বাস।
গত ১০ এপ্রিল ছেলেকে নিয়ে প্রথমবারের মতো টিভি চ্যানেলে হাজির হয়ে বিয়ে ও ছেলের কথা ঘোষণার দেয়ার সময়ও কেঁদেছিলেন অপু। এর সাত মাসের মাথায় আবার ছেলে জয় ও শাকিবের কথা বলতে গিয়ে অঝরে কাঁদলেন তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যার ওই লাইভ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক আবদুর রহমান তার কাছে জানতে চান, ‘এখন তোমার স্বামী শাকিব খান যে দূরত্বের মধ্যে আছে, ভবিষ্যতে যদি এই দূরত্ব আরও বাড়তে থাকে তখন তুমি কী করবে?’
উত্তরে অপু বলেন, ‘আমি ধরে নেব ভুলটা আমারই ছিল। হয়তো লাইভে আসার কারণে সে আমার প্রতি ক্ষিপ্ত। আমি বাচ্চা পেটে নিয়ে অনেক সাফার করেছি। তখন আমি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম। আমি ভাগ্য, সময়, বিবেচনা- সবকিছুই মেনে নিয়েছি। বেশি কিছু ভাবি না। যেটা হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা চাচ্ছেন তাই হচ্ছে। যেটা হবার নয়, আল্লাহ না চাইলে কখনোই হবে না।’
নিয়তিকে মেনে নেয়ার কথা বলতে গিয়ে নিজের একটি ঘটনা তুলে ধরেন অপু। ‘লাইভে আসার আগে আমি বাসায় দুধে সেমাই বসিয়েছিলাম। পাতিলটা নামানোর সময় হাত থেকে পড়ে গেল। কোনোভাবেই আর সেটাকে উঠিয়ে খাওয়া সম্ভব না। ওইটা আমার রিজিকে ছিল না। যতটুকু রিজিকে ছিল ততক্ষণ আমি রান্না করেছি। ফিল করেছি, ঠান্ডা হলে খাব। কিন্তু যখন পড়ে গেছে তখন ফিলটাও নষ্ট হয়ে গেছে। ওটা আর খেতে পারলাম না। আমাকে আবার তৈরি করে খেতে হবে।
‘আমি জয়কে পেটে নিয়ে নিজে নিজে সাফার করেছি। ভেঙে পড়িনি। কারণ আমি তখনই নিজেকে মেন্টালি সেটআপ করে নিয়েছি। শুধু ভেবেছি, সন্তানটা তো নিষ্পাপ। আর আমি যাকে ভালোবাসি, এটা সেই ভালোবাসার একটা প্রতীক। এটাই আমার কাছে অনেক কিছু।’
গত কয়েক মাস তোমরা আলাদা থাকো। দীর্ঘ একটা বছর। তো যখন একেবারে নিরালায় থাকো, একাকী থাকো, তখন মন কী বলে?
উপস্থাপকের এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন অপু। বলেন, ‘একা একা অনেক কান্না করি। নিজেকে হালকা করার চেষ্টা করি। আর আমার কষ্টটা আমি কারো সাথে শেয়ার করতে চাই না। এই কষ্টের ভাগিদার আমি নিজেই। কারণ পরিবার থেকে আমাকে আগেই না করে দিয়েছিল। তারা বলেছিল, সময় থাকতে সবকিছু নিজের মতো করে নাও। আমি সেটা করিনি। তার জন্য কান্নাটা আমার একান্ত।’
চোখের পানি মুছতে মুছতে অপু বলেন, ‘যে কষ্ট আমি পাচ্ছি সেটা আমার একার মধ্যেই রাখি। আমি চাই না আমার বয়স্ক মা এবং আমার পরিবারের যারা আমাকে অনেক ভালোবেসে বড় করেছে তারা জীবনে আর কোনো কষ্ট পাক। কষ্ট একজন পাওয়া ভালো। সবাইকে কষ্ট দেয়াটা আমার কাছে ভালো লাগে না। আমি সবকিছু উপরওয়ালার ওপরে ছেড়ে দিয়েছি। উপরওয়ালাকে আমি বিশ্বাস করি।’
কিছুটা ভালো সময় কাটে, জয় যখন কাছে থাকে। কিন্তু দিনশেষে রাতে, মধ্যরাতে কেমন লাগে?
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অপু বলেন, ‘ভালো আছি। প্লিজ আমাকে আর হার্ট কইরেন না। আমি অনেক ভালো আছি। বিয়ের পর থেকে দর্শকরা আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে, উৎসাহ দিয়েছে। এখনো দিচ্ছে। দোকান, এয়ারপোর্ট, যেখানেই যাই না কেন ভক্তরা দেখলে আমাকে স্যালুট জানায়। এত ভালোবাসার মধ্যে একটি ভালোবাসা তো তুচ্ছ। আর ওই একটি ভালোবাসা তো আমি সবকিছু ফুলফিল করি আমার সন্তান জয়ের মধ্য দিয়ে। সো, আমার কাছে ওটা বড় কোনো কষ্টের ব্যাপার না।’
উপস্থাপককে উদ্দেশ করে অপু বলেন, ‘ভালোবাসা কি শুধু আমি খুইয়েছি? আপনি তাকেও (শাকিব) প্রশ্ন করে দেখেন। তার জীবনে বড় একটা একাকিত্ব। আমার কাছে আমার ছেলে জয় আছে। তার কাছে কিছুই নাই। আমি কাজ শেষে, বেলাশেষে রাতে জয়কে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিচ্ছি। কিন্তু শাকিব? সে তো টোটালি একা। ওর কাছে না আছে জয়, না তার স্ত্রী তাকে দেখাশোনা করছে। আমার খারাপ লাগে কি জানেন, শাকিব ভীষণ একা, আমি কিন্তু একা না। আমি যখন ঘরে ঢুকি ছেলেটা তখন দৌড়ে আমার বুকের মধ্যে আসে। পৃথিবীর সমস্ত প্রেম-ভালোবাসা তখন আমার কাছে তুচ্ছ মনে হয়। সেটা হতে পারে স্বামী, হতে পারে মা-বাবাও। কারণ সন্তানটা তো আমার। শাকিব তো সেটাও মিস করছে। সো, একা সে, আমি না।’