আজকের প্রভাত প্রতিবেদক: কর্তৃপক্ষের চোখে ধুলা দিয়ে চরম দুর্নীতিতে মত্ত বিআইডব্লিউটিসি’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মনজুষ কান্তি দেবনাথ। বিআইডব্লিউটিসি’র নারায়ণগঞ্জ ডক-১, ২, ৩, ও ৪ এর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেন বিভিন্ন প্রকার ফেরির যন্ত্রাংশ সরবরাহকারীদের কাছ থেকে। টাকা ছাড়া কোন ফাইল সে স্বাক্ষর করেন না। এমন কি তার চাহিদামত টাকা দিতে সরবরাহকারীরা অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি যন্ত্রাংশগুলোর গুণগত মান ভাল হওয়া সত্ত্বেও তা চলবেনা বা পুরাতন বলে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। আর তার চাহিদামত টাকা পরিশোধ করলে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ/ মালামাল দিয়ে ফেরির মেরামত কাজ করান। যার ফলে কিছুদিন পরপর ফেরিগুলো বিকল হয়ে আবার ডকইয়ার্ডে ফিরে আসে এবং তার আয়ের উৎস বৃদ্ধি পায়।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, সিভিল কাজ সম্পর্কে তার ন্যূনতম ধারণা না থাকা সত্ত্বেও তিনি ডকইয়ার্ড (নারায়ণগঞ্জ) এ সরকারের উন্নয়নমূলক একটি বড় প্রজেক্টের পিডি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ঐ প্রজেক্টের কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে করালেও তিনি যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে পছন্দ করেন তাকে বিভিন্ন কৌশলে টাকার বিনিময়ে কাজ দেন। এক্ষেত্রে কাজগুলোর ৩০ শতাংশ কাজ ভালভাবে সম্পন্ন হয় না এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে টাকা ভাগাভাগি করে নেন।
ডাকইয়ার্ড ১, নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিসির সেন্ট্রাল স্টোর। যেখানে সংস্থার যাবতীয় মালামাল সংরক্ষণ ও ফেরি মেরামতের কাজ সম্পন্ন করেন। যার ফলে ফেরির যত প্রকার পুরাতন ও অকেজো মালামাল বাদ পড়ে তার সব মালামাল বিক্রি করে দেন এবং যেগুলো কাজে লাগানো যায় সেগুলো সরবরাহকারীদের মাধ্যমে আবার সরবরাহ করে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেন। এমনকি ফেরিতে যে সব যন্ত্রাংশ/মালামালের প্রয়োজন নেই সেসব যন্ত্রাংশ/মালামাল জরুরী প্রয়োজন বলে চাহিদাপত্র হেড অফিসে প্রেরণ করেন। চাহিদামত মালামাল / যন্ত্রাংশ পাওয়ার পর সেগুলো আবার অন্যত্র বিক্রয় করে দেন।
ফেরি মেরামতের কাজে সংস্থার যে সব কর্মকর্তা / কর্মচারী নিয়োজিত আছেন, তারা অফিস টাইমের পরও যদি কাজ করেন সেক্ষেত্রে তারা ওভারটাইম পান কিন্তু ওভারটাইমের টাকা পেতে হলে বাবুকে তার খুশিমত টাকা দেয়া লাগে। তা না হলে তারা ওভারটাইমের টাকা পান না।
জানা যায়, প্রকল্প পরিচালক হিসাবে প্রকল্পের টাকায় নিজের পছন্দমত ১টি দামী গাড়ী অতি শিঘ্রই ক্রয় করবেন। অথচ ১টি প্রকল্পও আলোর মুখ দেখেনি কিংবা দেখবে বলেও সন্দেহ। প্রকল্পগুলোর একটিরও আপটুডেট ডিজাইন ও সিস্টেম নেই। যার ফলে টেন্ডার-এর পরে নিজের পছন্দমত ডিজাইন ও সিস্টেম করে কাজ সম্পন্ন করে সংস্থার বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন। সংস্থার ডক-১, ২, ৩ ও ৪ এর সকল কর্মকর্তা/ কর্মচারী তার ক্ষমতার কাছে অসহায়। প্রতিদিন বাবুর সর্বনিম্ন আয় ৫০,০০০/- টাকা।
সূত্রে আরও জানা যায়, প্রকৌশলী মনজুষ কান্তি দেবনাথের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাঝে চরম ক্ষোভ ছিল। এর মাঝে মনজুষ কান্তি দেবনাথ বিভিন্ন পর্যায় থেকে জোর তদবীর করে নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত প্রধান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দায়িত্ব নিয়ে আরও বেপারোয়া হয়ে উঠেছেন। তার বেপরোয়া দুর্নীতির কারণে বর্তমানে নরায়ণগঞ্জ ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর ডকে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। ২ নম্বর ডকের এক প্রবীণ শ্রমিক জানান, মনজুষ কান্তি দেবনাথের উপরের চেহারা দেখে তাকে চেনা যাবে না কারণ তিনি নিজেকে সবার কাছে একজন ধার্মিক ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরেন অথচ তিনি এতটাই দুর্নীতিবাজ টাকা ছাড়া তিনি কোন ফাইল সই করেন না। আর তিনি ডকইয়ার্ড এলাকায় বলে বেরান সরকারের অনেক এমপি’র সাথে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তার দাপটে সবাই ভয়ে চুপ হয়ে থাকেন।