“আমি তারে চোখে দেখিনি/তার অনেক গল্প শুনেছি…../” এ গানের মতোই আনিসুল হক আমার জীবনে একটি রোমান্টিক ব্যক্তিত্ব। গানের কথাগুলো একটু বদলালে এমনটি হয়, আমি তারে টেলিভিশনের পর্দায় অনেক দেখেছি, তাঁর উপস্থাপিত অনুষ্ঠানের অনেক কথা তার মুখ থেকে শুনেছি। তার হাসি, দাড়িয়ে থাকা, হাতে স্পিকার নিয়ে মঞ্চে চলাফেরা বহুবার দেখেছি। বিটিভি ছাড়া তখন অন্য কোনো চ্যানেল ছিলো না। দূরদর্শন (TV) তখন ছিলো দুর্লভ। আশির দশকে আনিসুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান না দেখা বিরাট কিছু মিস করার মতো ছিলো। অনুষ্ঠান দেখা বাদ যেতো না। অধ্যাপক আব্দুল্লাহ্ আবু সায়ীদ স্যারের সঞ্চালিত অনুষ্ঠান আর আনিসুল হকের সঞ্চালিত অনুষ্ঠান দেখার অপরিসীম আকর্ষণ ছিলো। মনে হতো সারারাত, সারাক্ষণ তাদের অনুষ্ঠান হলেই ভালো হতো। টিভি পর্দার প্রমোদানুষ্ঠান দেখে ওই দু’জন ব্যক্তিত্ব আমার কলেজ জীবনে এতো প্রভাব ফেলেছিলো যা এখন মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি। আব্দুল্লাহ্ আবু সায়ীদ স্যার এবং আনিসুল হক বিটিভিতে একদিন একসঙ্গে অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন। ঐ দিন আমার স্মৃতিতে এমন দাগ পড়েছে যা পাহাড়ের গায়ে পাথরের খোদাই করা দাগ কাটার চেয়েও উজ্জ্বল। এমন ভাবগম্ভীর, যাদুকরী মধুময় সঞ্চালনার কথা মনকে ভরিয়ে দিয়েছিলো। আনিসুল হকের সাথে সরাসরি সাক্ষাত হয়নি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমি মনে প্রাণে তাঁর বিজয় কামনা করেছি। এ নিয়ে উত্তরায় দু’চার জনের সাথে আলাপ ও করেছি। নির্বাচন চলাকালে হঠাৎ একদিন এক বীর মুক্তিযোদ্ধা বললেন আনিস সাহেব এখন বিএনএস ভবনের দোতালায় আছেন। উপরে চলেন, দেখা হবে। আমি ও আতাউল গণি মাস্টার তখন ঐ ভবনের নিচে দাড়ানো ছিলাম। ধ্রুপদী ভালোলাগা, ভালোবাসার টানে দেখা করতে যাইনি, বরং দ্রুত ঐ স্থান ত্যাগ করে চলে এসেছি। তখন মনে হলো এতোদিন ধরে মনের ভেতর যে আনিস সাহেবকে লালন করে বড়ো করেছি দেখা হলে যদি সে আনিস সাহেব না হয়ে অন্য কেউ হয়ে পড়ে তা হলে ভীষন কষ্ট পাবো। আর দেখা হয়নি। হবেও না। কিন্তু আশির দশকের সেই চেনা আনিস সাহেবকে মনের অজান্তে আনিস ভাই বলে তার শুভ কামনা করেছি সবসময়।
আমার দৃষ্টিতে তিনি সেরা মেয়র, মিষ্টি মেয়র, পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ববান জনহিতৈষী অনন্য মেয়র, ভদ্র মেয়র সর্বোপরি উত্তম সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। উন্নত দর্শনের অধিকার। ব্যবসা, মিডিয়া, ব্যক্তিক-পারিবারিক ও সমাজ জীবনের সরথে রাজনৈতিকে সুচারু রূপে রূপায়নের এমন বহুমুখী নীতিবান জনপ্রিয় ব্যক্তি সত্যিই আমাদের দেশে বিরল। জনপ্রিয়তার ভরে তিনি নীতি আদর্শ হতে বিচ্যুত হননি। তিনি ছিলেন দক্ষ সমাজ শল্য চিকিৎসক। দক্ষ শল্যবিদের মতো সমাজের রোগ-ব্যধির সফল অস্ত্রোপচারক। সাময়িক ভুল বুঝলেও কাজের শেষে নির্মোহ ও সৎ কাজের জন্য সবাই তার প্রতি আরো বেশি খুশি হতো। তাঁর মরণে মেয়র চেয়ারটি এমন ভাবে পূরণ হবে কি-না কে জানে? আনিস ভাই যে সব অসমাপ্ত কাজ রেখে গেছেন বিশেষ করে বাসযোগ্য সবুজ ঢাকা গড়ে তোলার যে অসমাপ্ত কাজ রেখে গেছেন তা সম্পন্ন হলে হয়তো আনিস ভাইয়ের বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে। আনিস ভাই আমার কাছে দূরদর্শনের দুর্লভই রয়ে গেলেন চিরদিনের মতো।
লেখক: প্রধান শিক্ষক, শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়
টঙ্গী, গাজীপুর।
মোবাইলঃ ০১৮৫৬৪৭০০৫০
ইমেইল-sshs.tongi@yahoo.com