ঢাকাWednesday , 29 November 2017
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পৃথিবীপটে এক টুকরো স্বর্গ

editor
November 29, 2017 11:30 am
Link Copied!

নেত্রকোণা জেলা বাংলাদেশের অতি প্রাচীন অঞ্চলের একটি। দুর্গাপুর নেত্রকোণা জেলার একটি উপজেলা। বিরিশিরি, দুর্গাপুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি। এ সৌন্দর্য না দেখলে লিখে বুঝানো প্রায় অসম্ভব। আমি ঐ অঞ্চলটিতে একাধিকবার বেড়াতে গিয়েছি। ওখানকার মানুষ সহজ সরল বললে সামান্যই বলা হবে। মানুষগুলো সত্যিকার মানুষ বললেও অল্প বলা হবে। শিক্ষা বঞ্চিত হয়ে তাদের জীবন বোধ, অচেনা মানুষকে দেখা মাত্র আপন করার এক যাদুকরি সম্মোহন শক্তি রয়েছে। এতে বোঝা যায় তারা এ প্রযু্িক্ত যুগেও মানব ভালবাসার নিখুঁত উদাহরণ। প্রকৃতি ও মানুষ এখানে একাকার। এখানকার মানুষ প্রকৃতির মতই সুন্দর, নির্ভেজাল আর মানবদরদী। মানুষগুলো প্রকৃতির মতো উদার, সত্যাশ্রয়ী, প্রকৃতির প্রকৃত মানুষ। ধানক্ষেত, ফসলের মাঠ, নিবরতা, পাহাড়ের সবুজ দৃশ্য আকাশে মিশে গেছে। আলাদা জগতের কথা মনে করিয়ে দেয় এখানকার পরিবেশ। এখানে চিনামাটির পাহাড় কেটে যে ক্ষত-বিক্ষত করেছে তা সাধারণ মানুষের আফসোস। কারণ আমরা সাধারণ মানুষগুলো ওসবের মর্যাদা ও গুরুত্ব বুঝিনা। প্রকৃতিকে যারা একটু ভালবাসে যারা প্রকৃতিকে বোঝে তাদের হাহাকার কে শোনে? বলা হয় চিনামাটির পাহাড়। আসলে চিনা পাথরের অমুল্য পাহাড়। ওটা কেটে জনৈক সিরামিক ব্যবসায়ী প্রভুত লাভবান হয়েছেন। ওটা পাহাড়ের মৃত্যু, ভারসাম্য নষ্ট, জাতির স্বার্থ বিরোধী বলে আমার মনে হয়েছে। প্রকৃত রহস্য কী তা আমার জানা নেই।
একটা ষোল বছলের কুমারিকে শ্লীলতাহানী করলে যতোটুকু অন্যায় পাহাড় কাটা তার চেয়ে কম নয়। সম্পদ আহরনের নামে এমন দস্যুতা বাংলাদেশেই সম্ভব। আমি মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, ব্যাংকক ঘুড়েছি। এমন নৈসর্গিক অমৃত সুধা মনোরসের মতো সৌন্দর্য কোথাও দেখিনি। এ সৌন্দর্য একমাত্র বাংলাদেশের এ অঞ্চলেই আছে। দুধে আলতা মেশানো রংয়ের চেয়েও অতিপ্রাকৃতিক এ রূপের ছোঁয়া অন্য কোথাও আমার মনে লাগেনি। ওসব দেশে পাহাড় সংরক্ষনের ব্যবস্থা আছে পাহাড়ের গায়ে আচড় কাটা তো দূরের কথা। মায়ের গায়ে হাত তোলা জঘন্যতার সীমা ছাড়িয়ে যায়। আমাদের দেশে চিটাগাং সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাহাড় কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এটা কোন পর্যায়ের আচরণ তা কে বলবে?

আরাপাড়া সাদা মাটির পাহাড়

চিনা পাথরের পাহাড় কেটে খাল বানিয়ে ফেলেছে। ওসব খালের পানি পর্যটকের নজর কাড়ে। নীল রংয়ের স্বচ্ছ পানিতে পাহাড় এখন খালে পরিণত হয়েছে। পাহাড়ের মাঝখানে এতো গভীরভাবে খনন করে পাথর সংগ্রহ করেছে যা পাহাড়ের অস্তিত্ব সংকট তৈরী করেছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হলে মানুষের জীবন সংকটহীন হয়। জীবন রক্ষা পায় এবং বিপরীত হলে মানুষ সংকটে পড়ে জীবন বিপন্ন হয়। প্রাকৃতিক বৈরি আচরণে মানুষের মৃত্যু ঘটে। যেমন পাহাড় ধ্বস, ভূমিকম্প, সুনামি, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, মহাপ্লাবন, ভূগভের পানিস্তর শুন্য হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। ওসব দূর্যোগ যদি মানবসৃষ্ট হয় তাহলে যার কারণে ওসব হয়, নিরীহ মানুষগুলো মৃত্যু বরণ করে, তার জন্য ঐ লোকটিই দায়ী হয়। পাহাড় কেটে যে মারাত্মক পরিবেশ ঝুঁকিতে মানুষকে ফেলা হয়েছে তার দায় কে নেবে? না-কী এ সবের জন্য দস্যুতা করাই উপযুক্ত কাজ । এলাকার কিছু মানুষের সাথে কথা বলেছি। তারা জানালো সরকার খনিজ সম্পদ আহরণ করছে দেশের উন্নয়নের জন্য। তারা নিরীহ। যা বুঝানো হয়েছে তা-ই তারা বিশ্বাস করেছে। আমি প্রায় দেড় কিলোমিটার পাহাড় খুঁজে কোথাও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কোনো সাইনবোর্ড দেখতে পেলাম না। দু’স্থানে দুটো সাইবোর্ড দেখেছি। দুটোই পি,সি,আই লিঃ নামে লেখা। একটি সতর্ক বাণী এবং অন্যটিতে খলিজ এলাকা এবং মৌজা আরাপাড়া, দুর্গাপুর, নেত্রকোণা নিখে প্রবেশ নিষেধ লেখা আছে। দ্বিতীয় সাইবোর্ডটি একটি টিনের বাংলো টাইপের ঘরে সাটানো। ঘরের দরজায় তালাবদ্ধ। কেউ বলতে পারে না ও ঘরটা কখন খোলা ও বন্ধ হয়। সবাই ওই সব কাজকে স্বাভাবিক বলেই মনে করে। সবুজ পাহাড়, প্রকৃতির সন্তান প্রাকৃতিক নিয়মেই বিশ্বাসী। অফুরন্ত সুন্দরের ছায়ায় ওখানকার মানুষগুলো ডুবে থাকে। তাদের চাহিদা খুব সামান্য। তাদের দেখে অবাক লাগে। এখানে আকাশ নীল উদোম দেহে সারাক্ষণ রূপ বিলোচ্ছে। গাছগুলো দাঁড়িয়ে মানুষকে শুভেচ্ছ জানাচ্ছে। বিশেষ করে আগন্তুকদের জন্য সবুজ ছায়ার ডানা মেলে রেখেছে। পশুপাখিগুলোর আচরণেও অতুলনীয়। সবাই শান্তির প্রতীক হতে যেনো প্রতিদ্বন্ধিতা করছে। ওখানে স্বর্গীয় লক্ষণের চিহ্ন আছে। পাশে সোমেশ্বরি নদী প্রবাহিত। নদীর পানিতে চুম্বকের আকর্ষণ। পানির এতো আকর্ষণ তাতে স্পর্শ না করে উপায় নেই। ওই পানি সাগরের মতো নয়। উগ্রতা নেই। ধীরে ধীরে প্রবাহিত। এতা স্বচ্ছ কিন্তু স্পটিকের চেয়ে উত্তম। নদীর তলা দেখা যায় পানির ভেতর। যাত্রীরা পারাপারে খুবউ তুষ্ট। নির্ভীক মাঝি যাত্রীদের নিরাপদে নামিয়ে দেয় এক ঘাট হতে অন্য ঘাটে। চলমান জীবনে এমন মাঝি ক’নদীতে আছে? এখানে জীবন, নদী ও মাঝি এক হয়ে যায়। (ক্রমশ)

লেখক: প্রধান শিক্ষক
শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়, টঙ্গি, গাজীপুর।
মোবাইলঃ ০১৮৫৬-৪৭০০৫০
ইমেইল: sshs.tongi@yahoo.com

Please follow and like us:

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial