লাইফস্টাইল ডেস্ক : দোলার ইউরিন টেস্টের রিপোর্ট পজেটিভ দেখে নিলয়ের খুশির যেন কোনো সীমা নেই। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে ফোন করে জানাচ্ছে খবরটা। আর তাতে দোলার যেমন লজ্জাও লাগছে, আবার সেই সঙ্গে ওর চোখের সামনে একটা ফুটফুটে সুন্দর শিশুর ছবিও খেলা করছে। এভাবে বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছিল দিন।
দোলার তখন দশ সপ্তাহ। হঠাৎ করেই নিলয়ের অফিসে ফোন করে জানালো, ওর তীব্র পেট ব্যথা আর ব্লিডিং শুরু হয়েছে। ডাক্তারের কাছে গেলে জানতে পারলো ওদের এতদিনের স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে। মিসক্যারেজ হয়ে গেছে কিছুতেই তা মেনে নিতে পারছিল না দোলা। আর নিলয় না পারছিল নিজের মনকে শান্তনা দিতে, না পারছিল দোলার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে।
সাধারণত ২৪ সপ্তাহ আগে গর্ভস্থ শিশু বা ভ্রুণের মৃত্যুকেই মিসক্যারেজ বলে ধরা হয়। অকাল গর্ভপাত বা মিসক্যারেজ যেকোনো দম্পতির ক্ষেত্রেই এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। কিন্তু দুঃখের বিষয় শতকরা দশ থেকে পনেরজন দম্পতিকেই এই বেদনাদায়ক ঘটনার মুখমুখি হতে হয়। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে সন্তানের জন্য অপেক্ষা করে, একটু একটু করে স্বপ্নের জাল বুনে মিসক্যারেজ হয়ে যাওয়াটা খুবই কষ্টের। আর এই কষ্ট যতটা শারীরিক, ঠিক ততটা বা তারও বেশিই তা মানসিক। মানসিক ধকল থেকে বেরিয়ে আসতেও অনেকটা সময় লেগে যায়। এই মানসিক সংকট মোকাবিলা করার জন্য রইল কিছু পরামর্শ।
* নিজেকে দোষ দেবেন না : মিসক্যারেজের জন্য কখনও নিজেকে দোষী মনে করবেন না। আপনি আরো বেশি সাবধান হলে বা অন্য কিছু করলে হয়তো এরকম পরিস্থিতি আসতো না, এমন চিন্তা মাথায় আনবেন না। এটা এমন একটা ঘটনা যাতে কারো কোনো হাত নেই। তাই আপনার দোষেই এমনটা হয়েছে ভেবে নিজেকে কষ্ট দেবেন না। এতে লাভ তো কিছু হবেই না, উল্টো আপনি কিছুতেই এই দুঃখ ভুলতে পারবেন না।
* মন শক্ত করুন : যে অনাগত সন্তানের অপেক্ষায় আপনি দিন গুনছিলেন, তার হঠাৎ এই পরিণতি মেনে নেওয়া খুব কষ্টের। তারপরও মন শক্ত করুন। আপনার দুঃখ বাইরে প্রকাশ করবেন না। এতে অনেক অবাঞ্ছিত সহানুভূতি পাবেন। তাতে আপনার মন আরো খারাপ হয়ে পড়বে। প্রয়োজনে কিছুদিন কাজ থেকে ছুটি নিন। সবার সঙ্গে যোগাযোগ কম করুন।
* অন্যদের আলোচনা করতে না করুন : আপনার যদি এই বিষয়ে কথা বলতে বা শুনতে ভালো না লাগে, তাহলে সহজ ভাষায় সবাইকে বলে দিন আপনি এই সংক্রান্ত আলোচনা করতে বা শুনতে চান না। তারপরও কেউ এ বিষয়ে কথা বললে স্পষ্ট আপত্তি জানান। চেনা পরিবেশে থাকলে অনেক সময় মন আরো বেশি খারাপ হয়ে যায়। তাই কিছুদিনের জন্য কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন। চেনা ছকের বাইরে গিয়ে যেমন হালকা হতে পারবেন, তেমনি সবার প্রশ্নের বা সহানুভূতির সম্মুখীন হতে হবে না।
* ভয় পাবেন না : খুব কম সংখ্যক দম্পতির ক্ষেত্রেই বারবার মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এই নিয়ে অযথা ভয় পাবেন না। প্রয়োজনে সবরকম ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে নিন। জিনঘটিত কারণ ছাড়া অন্যান্য সব ধরনের মিসক্যারেজের ক্ষেত্রেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
* নিজেকে সময় দিন : যতক্ষণ না পুরপুরি সুস্থ হচ্ছেন, ততদিন নিজের সঙ্গে সময় কাটান। দুঃখটা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নিজের মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন না। অন্যের সঙ্গে নিজের জীবনের তুলনা মনে আনবেন না।
* সঙ্গীর সঙ্গে বন্ডিং তৈরি করুন : মিসক্যারেজ আপনার কাছে যতটা কষ্টের, আপনার সঙ্গীর ক্ষেত্রেও ঠিক ততটাই। তাই একে অপরের খারাপ লাগাটা শেয়ার করুন। অন্যজন কেন এগিয়ে এসে এই বিষয়ে কথা বলছে না, তা না ভেবে নিজেই এগিয়ে যান। হয়তো অপরজন বুঝতে পারছে না ঠিক কি বলা উচিত। নিজেদের মধ্যে বন্ডিং গড়ে তুলুন। যদি দেখেন আপনার সঙ্গী কিছুতেই এই দুঃখটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না, তাহলে আপনি উদ্যোগী হয়ে কোনো কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলুন।
* পরবর্তী সন্তান নিতে চাইলে : মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে তবেই পরের প্রেগন্যান্সির কথা ভাবুন। কারণ সুস্থ সন্তানের জন্য গর্ভাবস্থায় শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক স্থিতিও ভীষণভাবে প্রয়োজন।
* পুরুষ সঙ্গীর জন্য পরামর্শ : আপনি যতটা আপনার সঙ্গীর দুঃখ বুঝতে পারবেন, আপনার মতো করে কেউ তা পারবে না। তাই মিসক্যারেজের পর যেখানেই থাকুন না কেন স্ত্রীর সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ রাখুন। কোনো কথা বললে সঙ্গী দুঃখ পেতে পারে ভেবে একদমই চুপ থাকবেন না। এতে আপনার স্ত্রী আপনাকে উদাসীন মনে করে আরো কষ্ট পেতে পারে। তাকে বোঝান এই ঘটনায় আপনিও তার মতোই ব্যথিত। সঙ্গীকে বেশি করে সময় দিন। একসঙ্গে টিভি দেখুন, গান শুনুন। সঙ্গী যেন বুঝতে পারে এই কঠিন সময়ে আপনি সবসময় তার পাশেই আছেন।