ঢাকাবুধবার , ৬ মার্চ ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

গাজায় কড়া নাড়ছে দুর্ভিক্ষ

editor
মার্চ ৬, ২০২৪ ১১:০৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আজকের প্রভাত ডেস্ক: দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ফিলিস্তিনের গাজায় অচিরেই দুর্ভিক্ষ নেমে আসবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। আগামী সপ্তাহেই ২৩ লাখ জনসংখ্যার এই ভূখণ্ডে দুর্ভিক্ষ শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও আসতে পারে।
দুর্ভিক্ষ কী এবং কে ঘোষণা করে: আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) কোনও দেশ বা অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের মূল্যায়ন করে। এটি জাতিসংঘের এক ডজনেরও বেশি সংস্থা, বিভিন্ন আঞ্চলিক খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তা সংস্থা ও সাহায্য গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত একটি উদ্যোগ।
কোনও দেশ বা অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর ২০ শতাংশ চরম খাদ্য সংকটে ও প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন তীব্র অপুষ্টিতে ভুগলে এবং প্রতি ১০ হাজার জনের মধ্যে দুজন মানুষ প্রতিদিন অনাহারে বা অপুষ্টি ও রোগে মারা গেলে সেখানে দুর্ভিক্ষ চলছে বলে ঘোষণা করে আইপিসি।
গত ১৩ বছরে আইপিসি দুবার দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দিয়েছে- ২০১১ সালে সোমালিয়ায় এবং ২০১৭ সালে সুদানের কিছু অংশে।
গাজার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মূল্যায়ন কী: গত ডিসেম্বরের শেষদিকেই আইপিসি বলেছিল, গাজার পরিস্থিতি ইতোমধ্যে ২০ শতাংশের সীমা অতিক্রম করেছে।
আর বাকি দুটি- তীব্রভাবে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের ও অনাহারে বা অপুষ্টি এবং রোগের কারণে প্রতিদিন মারা যাওয়া লোকের সংখ্যার সীমাও আগামী মাসগুলোতে যেকোনো সময়ে লঙ্ঘিত হতে পারে।
আইপিসি আরও বলেছিল, “বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বা আরও খারাপ হলে ২০২৪ সালের মে মাসের মধ্যেই গাজায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি রয়েছে।”
এরপর ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ বলেছিল, গাজার ২৩ লাখ মানুষের এক চতুর্থাংশেরও বেশি বঞ্চনা ও অনাহারের বিপর্যয়কর মাত্রার সম্মুখীন হবে।
সংস্থাটি আরও বলেছে, দ্রুত কোনও পদক্ষেপ না নিলে দুর্ভিক্ষ প্রায় অনিবার্য।
চলতি মাসের মাঝামাঝি আইপিসি গাজার পরিস্থিতি নিয়ে একটি নতুন বিশ্লেষণ প্রকাশ করবে।
দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করলে কী হয়: দুর্ভিক্ষের ঘোষণা কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া বা বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি না করলেও এতে বিশ্ববাসীর নজর যায় সেদিকে। তখন দুর্ভিক্ষ-পীড়িতদের কীভাবে সাহায্য করা যায় তা নিয়েও বিশ্ববাসী ভাবতে শুরু করে।
তবে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় বলছে, দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করতে করতে অনেক দেরি হয়ে যায়। তার আগেই বহু মানুষ মরে যায়।
গাজায় দুর্ভিক্ষ হলে তার দায় কার: জাতিসংঘ ইসরায়েলকে গাজায় দখলদার শক্তি হিসেবেই দেখে এবং বলে যে সেখানকার মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দায়িত্ব রয়েছে।
যুদ্ধের আইন সম্পর্কিত ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশনে বলা আছে, “কোনও অঞ্চলের দখলদার শক্তিরই দায়িত্ব সম্ভাব্য সব উপায়ে অঞ্চলটির জনগণের খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ নিশ্চিত করা।”
ইসরায়েল কী বলছে: ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় ইসরায়েল ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করে। এই ভূখণ্ডগুলো নিয়েই ফিলিস্তিনিরা নিজেদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র চায়। ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে এবং এর পরের বছরই তথা ২০০৬ সালে হামাস ফিলিস্তিনের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়। কিন্তু ইসরায়েলই প্রতিবেশী মিশরের সঙ্গে থাকা গাজার সীমান্ত এখনও নিয়ন্ত্রণ করছে।
তবে ইসরায়েল বলছে, গাজা ও পশ্চিম তীর কোনও স্বাধীন রাষ্ট্র থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দখল করা হয়নি। কারণ ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের সময় স্বাধীন-সার্বভৌম কোনও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছিল না। সেসময় জর্ডান ও মিশরের নিয়ন্ত্রণে ছিল এই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডগুলো। ইসরায়েল ভূমির সঙ্গে ইহুদিদের ঐতিহাসিক এবং ধর্মগ্রন্থীয় সম্পর্কের প্রতিও জোর দেয়।
গাজার মানবিক পরিস্থিতি এতো ভয়াবহ হলো কী করে: গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজার শাসকদল হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রায় ১২০০ জনকে হত্যা ও ২৫৩ জনকে জিম্মি করে নিয়ে আসে। এর জবাবে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং গাজার ওপরও সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে। গত পাঁচ মাসের যুদ্ধে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৩০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
বর্তমানে মিশর থেকে রাফাহ ক্রসিং এবং ইসরায়েল থেকে কেরাম শালোম ক্রসিং এর মাধ্যমে শুধু দক্ষিণ গাজায় সাহায্য পাঠানো যাচ্ছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে গড়ে প্রায় ৯৭টি ত্রাণের ট্রাক প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করতে পেরেছিল। তার আগে জানুয়ারিতে প্রতিদিন প্রায় ১৫০টি ট্রাক গাজায় ঢুকতে পেরেছে। অথচ গাজার মানুষদের বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৫০০ ট্রাক ত্রাণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল জাতিসংঘ।
কিন্তু জাতিসংঘের অভিযোগ, যুদ্ধ, নিরাপত্তাহীনতা ও ইসরায়েলের অতিরিক্ত বিধি-নিষেধের কারণে গাজায় ঠিকমতো খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যভর্তি ত্রাণের ট্রাক ঢুকতে পারছে না।
জাতিসংঘ বিশেষ করে, সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ থাকা, চলাচলের ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ, প্রবেশাধিকার অস্বীকার, কঠোর পরীক্ষা পদ্ধতি, নিরাপত্তা ঝুঁকি, ধৈর্য্যহারা বেসামরিক নাগরিকদের কার্যকলাপ, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি এবং যোগাযোগ ও সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের উপর বিধিনিষেধের মতো কারণের উল্লেখ করেছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েল বলেছে, তারা গাজার মানবিক পরিস্থিতির উন্নতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বেসামরিক নাগরিকদের জন্য সাহায্যের কোনও সীমা নেই। ত্রাণ সরবরাহে সমস্যার জন্য ইসরায়েল উল্টো জাতিসংঘকেই দায়ী করে বলেছে, সাহায্যের পরিমাণ এবং গতি কম হওয়াটা জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার সক্ষমতার উপর নির্ভরশীল।

Please follow and like us:

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial