ঢাকাবুধবার , ২৪ জানুয়ারি ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

চলমান প্রকল্প দ্রুত শেষ করে নতুন প্রকল্প নিন: প্রধানমন্ত্রী

editor
জানুয়ারি ২৪, ২০২৪ ১০:০৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আজকের প্রভাত রিপোর্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে এবং যথাযথ যাচাই-বাছাই করে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে যেগুলোর খরচ কম হবে, সেগুলো আমাদের দ্রুত শেষ করতে জন্য হবে। কারণ, আমি মনে করি, যত তাড়াতাড়ি আমরা সেগুলো শেষ করতে পারবো, তত বেশি সুবিধা পাবো।’
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা কমিশনের সভায় সভাপত্বিকালে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটা প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার পর এর ফলাফল পাই, তারপর আরেকটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করি।’
শেখ হাসিনা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে দেরি না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহবান জানান।
সরকার প্রধান বলেন, ‘আপনাদের অনুরোধ করবো, এখন সব থেকে বেশি যেটা দরকার, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেটা আমাদের বেছে নিতে হবে। এগুলো চিহ্নিত করতে হবে, কোন প্রকল্পগুলো সামান্য কিছু টাকা দিলেই আমরা শেষ করে ফেলতে পারবো। প্রকল্পগুলো যত দ্রুত শেষ করে ফেলা যায় ততই ভালো। কারণ, একটি প্রকল্প শেষ হলে তার ফলাফল আসে। আমরা লাভবান হই এবং নতুন প্রকল্প নিতে পারি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজেই এখানে দীর্ঘসূত্রতা যেন না হয়, বার বার যেন প্রকল্প সম্পন্ন করতে দেরি না হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা যায়Ñ অনেকগুলো প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু সেটা করার কোনও সুযোগ নেই। সেটা কিন্তু হতে দেওয়া যাবে না। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়কে সেভাবে নির্দেশ দেওয়া হবে।’
তিনি প্রকল্প পরিচালকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কারণ, অনেক সময় দেখা যায়, অনেককে প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যারা কাজটা ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেন না বা মনযোগী হন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন কোনও উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা হাতে নিই, সে সময় খেয়াল রাখতে হবে কোনটা আমার দেশের জন্য প্রযোজ্য এবং প্রয়োজন। অনেক সময় প্রকল্প পরিচালনার জন্য আমরা এডিবি বা বিশ্ব ব্যাংক বা অন্যান্য সংস্থা বা দেশ থেকে ঋণ নিয়ে কাজ করি। অনেক সময় দেখা যায়, অনেক বড় অঙ্কের টাকার প্রকল্প নিয়ে আসা হয়।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে আমি আবারও বলবো, অহেতুক একটা প্রস্তাব আসলো বড় আকারের, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ না করে প্রতিটি প্রস্তাবের ক্ষেত্রে এটাই মাথায় রাখতে হবে- সেখানে আমাদের কী পরিমাণ টাকা ব্যয় হবে, আমরা কী পরিমাণ ঋণ নিচ্ছি এবং সুদসহ কী পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হবে এবং সেটা করার মতো আমাদের সক্ষমতা আছে কিনা, এসব যাচাই বাছাই করা একান্তভাবে দরকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন-তখন যেকোনও প্রকল্প গ্রহণ করি না। আগে চিন্তা করে দেখি, কোনটা দেশের কাজে লাগবে আর কোনটা লাগবে না। এর থেকে মানুষ কতটুকু পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অযথা টাকা ধার করা নয়। কারণ, যা সুদসহ আমাকেই পরিশোধ করতে হয়। তাই, এই বোঝা যাতে আমাদের কাঁধে না পড়ে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। পাশাপাশি যে প্রকল্প আমরা নেবো সেটা আমরা ওই কাজের বা ওই এলাকার জন্য কার্যকর কিনা এবং এর থেকে সাধারণ মানুষ কী পরিমাণ লাভবান হবে, সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এছাড়া অর্থনীতিতেও কেমন গতি সঞ্চার হবে তাও দেখতে হবে।’
বিশ্বে চলমান যুদ্ধপরিস্থির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি যে, যেহেতু অর্থনৈতিকভাবে একটা চাপ আছে, যার জন্য যথাসময়ে অর্থ হয়তো আমরা ছাড় করতে পারিনি। আর এই নির্বাচনের ডামাডোলে সবকিছু একটু ধীর গতিতে চলেছে। নির্বাচন তো সম্পন্ন হয়ে গেছে। কাজেই এটা আর ধীরগতিতে চললে হবে না। এখন আরও দ্রæত ব্যবস্থা নিতে হবে। এই নির্বাচনকালীন যে সময় আমাদের নষ্ট হলো, সেটা আমাদের এখন পূরণ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সামনে সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যেটা আসবে- ২০২৬ সালে আমাদের গ্র্যাজুয়েশন কার্যকর শুরু হবে। সেখানে কী কী সুবিধা পাবো, আর কোনটা আমাদের জন্য সব চেয়ে বেশি কার্যকর সেটা আমাদের বাছাই করতে হবে। আমরা সেভাবে কাজ শুরু করব। এর সঙ্গে এলডিসি হিসেবে যে সুবিধাগুলো আমরা পেতাম, তার মধ্যে অনেকগুলো কিন্তু আমরা পাতো না। যদিও এগুলো প্রস্তাব করেছি-২০৩২ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে। এ বিষয়গুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে, সেগুলো আমরা কীভাবে মোকাবিলা করবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকটি দেশের জন্য যুদ্ধের ফলাফল খারাপ। কারণ, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়, অনেক কিছুই আমরা উৎপাদন করি, কিন্তু, যেসব পণ্য আমাদের দেশে উৎপাদন কম হয় বা আমদানি করতে হয়Ñ সেসব পণ্যের মূল্য এবং পরিবহন ব্যয় অত্যাধিক বেড়ে গেছে। তারপর ঋণের সুদ বেড়ে যাওয়া, এর একটা বিরাট চাপ আমাদের অর্থনীতির ওপর পড়েছে।’ এসময় কোভিড-১৯ চলাকালীন বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া থেকে সরকারের কোভিড মোকাবিলার সাফল্যের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন তিনি।
সরকার প্রধান বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি অর্জন আমাদের ধরে রাখতে হবে। এখানে মূল্যস্ফীতি একটি বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। মূল্যস্ফীতি যদি প্রবৃদ্ধির থেকে কম থাকে, তাহলে তার শুভ ফল মানুষের কাছে পৌঁছায়। মূল্যস্ফীতির কিছুটা আমরা লাগাম টেনে ধরেছি, আমাদের সামনে আরও কমাতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেকটা পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এই চিন্তাও মাথায় রাখতে হবে- প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে অর্থ ছাড় বা এর ব্যবহারের ফলে মূল্যস্ফীতি যেন আর না বাড়ে। যে মূল্যস্ফীতি বর্তমানে আছে, সেটা আমরা কীভাবে কমিয়ে আনবো সে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তার সরকার কৃষি, গ্যাস, বিদ্যুৎ প্রভৃতিতে ভর্তুকি দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ভর্তুকি ও আমাদের ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হবে। কারণ, এক্ষেত্রে ভর্তুকি অনেকাংশে বাড়িয়ে ফেলায় মূল্যস্ফীতি ও বেড়ে গেছে। এখন আমাদের যেটা করতে হবে- একটি সুনির্দিষ্ট সময়ে কত শতাংশ বাড়ালে আমাদের মূল্যস্ফীতিতে চাপ পড়বে না, সেটা মাথায় রেখে আমাদের ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। আমরা চট করে বেশি বাড়াতে পারবো না, সেটা মাথায় রেখে আমাদের চলতে হবে।’
‘পাঁচ বছর টাইম ইজ টু শর্ট’ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘কাজেই পাঁচ বছর আমি কাজ করে যাবো দেশের জন্য। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিয়েছি। সেটা মাথায় রেখেই আমাদের কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করতে হবে। সরকার গঠন করার পরে দ্রুত আমরা বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি। কারণ, নষ্ট করার মতো সময় আমাদের হাতে নেই।’
প্রধানমন্ত্রী ভাষণের শুরুতে বলেন, ‘আমি জাতির কাছে ঋণী এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ, বারবার তারা ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছে। আমি আজকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব পেয়েছি। স্বাধীনতার সুফল এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেন আমরা ঘরে ঘরে পৌঁছাতে পারি, স্বাধীনতার শুভ ফল যেন জনগণ পায় সেজন্যই আমাদের পথ চলা।’

Please follow and like us:

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial