ঢাকাশনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০১৯
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দুর্নীতি করে জৌলুস বাড়তে পারে, মর্যাদা পাওয়া যায় না: শেখ হাসিনা

editor
নভেম্বর ২৩, ২০১৯ ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ডেস্ক রিপোর্ট: যুবলীগের কংগ্রেসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কতটুকু পেলাম, কী পেলাম না, এটা নয়, কতটুকু কাজ করতে পারলাম, সেটাই হবে রাজনীতিবিদের চিন্তা। এই চিন্তা মাথায় রেখে যারা রাজনীতি করে, তারাই সফল হবে। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শে যারা থাকতে চায়, তাদের এই চিন্তা নিয়েই চলতে হবে। দুর্নীতি করে কেউ টাকা বানাতে পারে, এই টাকা দিয়ে জৌলুস করতে পারে, চাকচিক্য বাড়াতে পারে, আন্তর্জাতিক বড় বড় ব্র্যান্ডের জিনিস পরতে পারে। কিন্তু তাতে সম্মান পাওয়া যায় না। মানুষ হয়তো অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকাতে পারে। কিন্তু মর্যাদা পাওয়া যায় না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’ আজ শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসে (সম্মেলন) প্রধান অতিথি হিসেবে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি এসব কথা বলেন। দুপুর দেড়টার দিকে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখেন। এর আগে বেলা ১১টায় তিনি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী যুবলীগের সব নেতাকর্মীসহ যুবসমাজকে মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান। সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। এর মাধ্যমে সংগঠন যেমন চলতে পারে, দেশকেও কিছু দেওয়া যায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে। ক্ষমতা আগে দখল করে, উড়ে এসে জুড়ে বসাদের ক্ষমতার উচ্ছিষ্টের ভাগ দিয়ে এই সংগঠন গড়ে ওঠেনি। এই সংগঠন গড়ে উঠেছে নির্যাতিত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের জন্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামের লক্ষ্য নিয়ে। এই আদর্শ থেকে যারা বিচ্যুত হয়, তারা দেশকে কিছু দিতে পারে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের চলার পথে, উন্নয়নের পথে যদি কেউ বাধা দেয়, তাহলে তাকে আমি ছাড়বো না। সে যেই হোক, সে কোনও সহানুভূতি পাবে না। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।’ তিনি বলেন, ‘যুবলীগ এই দেশে রাজনৈতিকভাবে অনেক অবদান রেখেছে। প্রত্যেকটা আন্দোলনে যুবলীগ ভূমিকা রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধে এই যুবকরাই তো বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। তবে যুবকরা যেন দেশের কল্যাণে কাজ করে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ থেকে অনুপ্রাণিত হতে তিনি সবাইকে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই দুটি পড়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর এই দুটি বই পড়তে বলবো। এছাড়া ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থার সব রিপোর্ট আমি প্রকাশ করছি। পৃথিবীতে এটা কখনও হয়নি। তবে এটার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান বের হয়ে আসবে। ইতোমধ্যে চারটি খণ্ড বের হয়েছে। ১৪টা খণ্ড বের হবে। এটার মধ্য দিয়ে বের হবে তিনি বাঙালি জাতির জন্য কী করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশ থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। পাকিস্তানিরা দেশকে ধ্বংস করে দিয়ে গিয়েছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের দায়িত্ব নিলেন বঙ্গবন্ধু। শূন্যহাতে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি দেশটিকে আবার গড়ে তোলেন। রাস্তাঘাট, সেতু, স্কুল-কলেজ চালু করেন। ঘরে ঘরে নির্মাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। মাত্র ৯ মাসের মধ্যে একটি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। এমনভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন যে দেশ স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি পেয়েছিল। সাত ভাগ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। একটি প্রদেশ যা ছিল শোষিত-বঞ্চিত, সেটিকে তিনি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘৭৫-এ সেই অগ্রযাত্রা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেশ অন্ধকারের দিকে যাত্রা শুরু করে। ১৯টি ক্যু হয়েছিল। যুবসমাজকে বিপথে ঠেলে দেওয়া হয়। ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে ব্যবহার করা হয় ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার কাজে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। যারা পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিল, তাদের ফিরিয়ে আনা হয়। এদের ভোটের অধিকার দেওয়া হয়, মন্ত্রী করা হয়। রাষ্ট্রপতি প্রার্থী পর্যন্ত হতে দেওয়া হয়েছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। বাংলাদেশের মানুষ প্রথম বুঝলো কোনও সরকার দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারে। কিন্তু সেই সুখ বেশিদিন টিকলো না। ২০০১ সালে আমাদের সরকারে আসতে দেওয়া হলো না। সেখানেও ছিল চক্রান্ত। এরপর বিএনপির আমলে বাংলাদেশ বিশ্বে তার সম্মান হারালো। পাঁচবার দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হলো। তবে মানুষ আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনে। কিন্তু বিএনপি যদি এতই জনপ্রিয় দল হয়ে থাকে, তাহলে ২০০৮-এর নির্বাচনে মাত্র ২৯টা সিট কেন পেয়েছিল। ওই নির্বাচন তো নিরপেক্ষ হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘যাদের দুর্নীতিটাই ছিল নীতি, যে এতিমের টাকা আত্মসাতের দায়ে কারাগারে, যার ছেলে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, মানি লন্ডারিং মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, তারা কী করেছে দেশের জন্য।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু লোভ লালসার ঊর্ধ্বে উঠে একটি দেশ সৃষ্টি করে দিয়ে গিয়েছিলেন। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, ভোগে নয়, ত্যাগেই সুখ। কতটুকু পেলাম তা নয়, কতটুকু কাজ করতে পারলাম, সেটা ভাবতে হবে। এই চিন্তা মাথায় রেখে যারা রাজনীতি করে, তারা সফল হবে। যারা দুর্নীতি করে জৌলুস করতে পারে, চাকচিক্য দেখাতে পারে, তারা কিন্তু সম্মান পায় না। দেশের মানুষের কাছে মর্যাদা পাওয়া যায় না।’ সম্মেলন উপলক্ষে তিনি যুবলীগের সব নেতাকর্মীকে শুভেচ্ছা জানান।

Please follow and like us:

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial