ঢাকাবুধবার , ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পঁচাত্তরের পর এবারই সবচেয়ে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

editor
ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৪ ৭:২৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আজকের প্রভাত ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ সালের পর গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি মনে করি, বাংলাদেশে সেই ’৭৫ সালের পর থেকে যত নির্বাচন হয়েছে সেখানে সবথেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে এবার।”
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) গণভবনে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে অনেক চক্রান্ত ছিল, ষড়যন্ত্র ছিল। তিনি এ সময় স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের হাতে তৈরি দল বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও, নৈরাজ্য এবং সন্ত্রাসের কঠোর সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, তারা মানুষ পুড়িয়ে মারা, রেলের ফিশপ্লেট খুলে রেলের বগি ফেলে দেওয়া, রেলে আগুন দেওয়াসহ নানা অপকর্ম করে নির্বাচন ঠেকাতে চেয়েছিল। কিন্তু, এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় কথা হলো জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছে এবং ভোট দিয়েছে। জনগণ তাদের ভোটের অধিকার যে ফিরে পেয়েছে সেটা এবার তারা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ জানুয়ারি আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে গেছে। নির্বাচনের সময় সভা করেছি। নির্বাচনের পরেও টুঙ্গিপাড়ায় গিয়েছিলাম, আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। এরপর আমি মনে করলাম, আপনারা ভোট দিয়ে আমাকে কোথায় পাঠালেন সেই জায়গাটা তো আপনাদের একটু দেখতে হবে। সেজন্যই আজকে আমার এখানে আপনাদের দাওয়াত, সেজন্যই আপনারা এখানে এসেছেন। তিনি গণভবন সবাইকে ঘুরে দেখারও আমন্ত্রণ জানান। কারণ, এটা তাদেরই ঘর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে কিন্তু আপনাদের এখানে কোনও রাজনীতি করতে ডাকিনি। আমি মনে করি, আজকে টুঙ্গিপাড়া থেকে এখানে উপস্থিত হয়েছেন, এই গণভবনের মাটি আজকে ধন্য হয়েছে। নির্বাচনে জয়ী হয়ে আমরা সরকার গঠন করেছি। সেটাও আমি মনে করি আপনাদেরই অবদান। কারণ, আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া সেটা কখনও সম্ভব ছিল না। সেজন্য আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালিপাড়ায় আমি বারবার প্রার্থী হয়েছি, আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, আপনারা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। আমি জানি, ’৭৫-এর পর এসব অঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত কষ্ট ভোগ করেছেন। যা হোক, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পেরেছি। তার সরকারের ভূমিহীন-গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়াসহ জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে নিজেদের এলাকায় ভূমিহীন-গৃহহীন থাকলে খুঁজে বের করার আহŸান জানান। কেননা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলায় একটি মানুষও আর ঠিকানাবিহীন থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সংসদের অধিবেশন রয়েছে। যেখানে তার প্রশ্নোত্তর পর্ব রয়েছে, যেটা তিনিই চালু করেছিলেন। কারণ, তিনি মনে করেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নিজেরও একটা জবাবদিহি থাকা দরকার। তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে তার এলাকার জনগণকে ভাগ ভাগ করে সংসদ অধিবেশন প্রত্যক্ষ করার সুযোগ করে দেবেন বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি এ সময় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটির কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি এবং ছোট বোন শেখ রেহানা বাড়িটি দান করে দিয়েছেন। যেটি একটি একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। যেখানে দেশ-বিদেশের মানুষ আসেন সেটা দেখার জন্য।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের এলাকার লোকজনেরও এটা দেখার দরকার। কারণ, আপনারা এমন একটা জায়গা থেকে এসেছেন, যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেছেন এবং সেখানেই ঘুমিয়ে আছেন। কাজেই তার জীবনযাপন, ’৭৫-এর মর্মান্তিক হত্যাকান্ড, যেখান থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন—এসব অনেক কিছুই জানতে পারবেন আপনারা সেই বাড়িতে গেলে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। কাজেই আমার একটাই দায়িত্ব—এই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো আর মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। আর সেই কাজটা আমি যে নিশ্চিন্তে করতে পারছি, সেটা করতে পারছি কেবল আপনাদের জন্য। কারণ, আপনারা আমাকে সেই সুযোগটা করে দিয়েছেন। আমার সব দায়িত্ব তো আপনারাই নিয়েছেন। আমার কোনও কষ্ট নেই। আমার মনে হয়, এই দায়িত্বটা যদি আপনারা না নিতেন, বাবা-মা-ভাই হারিয়েছি, আমার জন্য আমার হয়ে বলার কে আছে? কিন্তু আজকে আপনারা আমাকে সেই সাহস দিয়েছেন, শক্তি দিয়েছেন। যার জন্য আমি নিশ্চিন্ত মনে দেশের কাজ করতে পারছি। দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারছি।
তিনি বলেন, আমার এলাকায় নির্বাচন পরিচালনার জন্য কমিটি করা থেকে শুরু করে যেভাবে আপনারা কাজ করেছেন এটা সারা দেশের সব প্রার্থীর জন্য একটা দৃষ্টান্ত হয়ে গেছে। আমাদের অনেক প্রার্থীও তা অনুসরণ করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা বাস্তব যে এই ১৫ বছরে বাংলাদেশকে আমরা বদলে দিতে পেরেছি। সবথেকে বড় কথা, আজকে পদ্মা সেতু হয়ে গিয়েছে বলেই আপনারা খুব সহজেই (গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণবঙ্গ থেকে) চলে আসতে পারছেন।
জাতির পিতার কন্যা বলেন, বিশ্বব্যাংক ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগ দিয়েছিল। সেটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে প্রমাণ করেছি যে এখানে কোনও দুর্নীতি হয়নি এবং নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করে বিশ্বকে দেখিয়েছি যে আমরাও পারি।
তিনি বলেন, সামনে আমাদের যাত্রাপথ এত সহজ নয়। আমাদের অনেক বাধাবিপত্তি অতিক্রম করতে হয়। অনেক চক্রান্তই বাংলাদেশটাকে ঘিরে আছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সার তৈরি করায় সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। যাতে ঘরে বসেই দেশ-বিদেশে কাজ করে অর্থ উপার্জন করা যায় এবং উদ্যোক্তা তৈরিতে তার সরকারের পদক্ষেপ ও বিনা জমানতে ঋণ সুবিধা প্রদানসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
কোনোরকম পরীক্ষায় একটা পাস করে চাকরির পেছনে না ছুটে যুব সমাজকে নিজের বস নিজে হওয়ার মাধ্যমে আরও ১০ জনের কর্মসংস্থানে এগিয়ে আসার জন্য আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান তিনি।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ বিশ্বব্যাপী যুদ্ধাবস্থার জন্য খাদ্যের ক্রয়মূল্য এবং পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতির কারণে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষদের অসুবিধা হওয়ার কথা উল্লেখ করে সারা দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর তার আহবানও পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ার জনগণও পিছিয়ে থাকবে না মর্মে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাসের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহবানও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচিত চেয়ারম্যান-মেম্বার যারা আছেন তাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, আমরা অনেক প্রকল্প নিই এবং কাজ করি, সেই কাজগুলো যাতে যথাযথভাবে হয়। মানুষ যেন এই কাজের সুফল পেতে পারে এবং এর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পারে, সেদিকে লক্ষ রেখেই স্থানীয় সরকারের যে কাজগুলো সেগুলো আপনারা করবেন। কাজের মানটা যেন ঠিক থাকে এবং কাজগুলো যেন যথাযথভাবে হয়। যেভাবে কাজ করলে দেশের মানুষের কল্যাণ হবে, দেশের মানুষের উন্নতি হবে, সেভাবে করবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তার একটাই আকাঙ্ক্ষা শেষ জীবনে টুঙ্গিপাড়ায় থাকবেন, যেখানে জাতির পিতা ঘুমিয়ে আছেন।

Please follow and like us:

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial