শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪, ২৭ বৈশাখ, ১৪৩১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বসুন্ধরা রামপুরা শাহবাগে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ

editor
আগস্ট ৬, ২০১৮ ৫:১৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরা আন্দোলনের পর গতকাল রাজধানী ঢাকার চিত্র ফের পুরনো রূপ ফিরে পেয়েছে। অঘোষিত ধর্মঘট প্রত্যাহার করায় সকাল থেকেই গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়। তবে ট্রাফিক সপ্তাহ থাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল অনেক কম। অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও রাজপথে নামেনি। এর মধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছিল শাহবাগ, বসুন্ধরা ও রামপুরা এলাকা। সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ওক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন। এছাড়া কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
শাহবাগ: নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে গতকাল বিকেল তিনটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ পরে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে ৷ একপর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর জলকামান ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ৷
ঘটনাস্থল থেকে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া দশজন আহত হয়েছেন বলে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী জানিয়েছেন৷আটককৃতদের একজনের নাম হোসাইন ইশাদী মাহমুদ। অপরজনের নাম আশরাফুল হক ইশতিয়াক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র। এদিকে আন্দোলনকারীদের হাতে পুলিশের একজন কর্মী আহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। পুলিশের এক সদস্যকেও ইটের আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে যেতে দেখা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, আমরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগে অবস্থান করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ জলকামান ছোড়ে আমাদের দিকে। এর কিছুক্ষণ পর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ৷ তাদের ধাওয়া খেয়ে আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই৷’
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা জোনের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের জানান, ‘শাহবাগ এলাকায় দুটি বড় বড় হাসপাতাল রয়েছে। আমরা সবসময় চেষ্টা করি এই জায়গায় যাতে কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হয়। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে একদল শিক্ষার্থী শাহবাগের দিকে আসে। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি। এরপর আমরা জলকামান ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেই। তারা ক্যাম্পাসে চলে গেছে। এ সময় আমাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। কয় জনকে আটক করা হয়েছে এই মুহূর্তে তা সঠিকভাবে বলতে পারবো না।’
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেন বলেন, কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে ৷ কয়জনকে আটক করা হয়েছে তা আরও পরে বলা যাবে৷
রামপুরা: রামপুরা ও আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে মেরুল বাড্ডার দিক থেকে একদল যুবক লাঠি নিয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। লাঠি হাতে যুববকদের মধ্যে বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের দেখা যায় বলে স্থানীয় একজন বাসিন্দা জানান। এক পর্যায়ে ওই যুবকরা রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয় এবং সাধারণ পথচারীদের ওপর চড়াও হয়। স্কুলের পোশাক পরিহিত দুজনকে এ সময় পেটাতে দেখা যায়।
এক পর্যায়ে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও এপিবিএন সদস্যরাও সেখানে অবস্থান নেন। তারা শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বললে তারা না গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে টায়ার জ্বালিয়ে দেয়।
পরে পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়লে শিক্ষার্থীরা ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ভেতরে চলে যায়। লাঠি হাতে রাস্তায় অবস্থান নেওয়া যুবকরা তখনও ইউনিভার্সিটির দিকে ঢিল ছুড়ছিল। এ সময় সেখানে দায়িত্বরত প্রথম আলোর প্রতিবেদক নাসরিন আক্তার সুমির ওপর চড়াও হয় একদল যুবক। তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় তারা। পরে তাকে বাড্ডা পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে ফোনের সব তথ্য পুলিশ মুছে ফেলে বলে অভিযোগ করেন সুমি।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্রী আইনুন নাহার জ্যোতি বলেন, ‘সকাল থেকে ক্যাম্পাস শান্ত ছিল। রুটিন অনুযায়ী সব বিভাগে ক্লাস হচ্ছিল। সোয়া ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে হঠাৎ ইটপাটকেল ছোড়া শুরু হয় এবং লাঠি দিয়ে গেটে আঘাত করে হামলাকারীরা। সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা কর্মীরা গেট বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনায় কয়েকজন ছাত্র আহত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত। কিন্ত হামলাকারীরা নেই।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থীর দাবি, হামলাকারীরা স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মী
বসুন্ধরা: দুপুর আড়াইটার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এরপর থেকে বসুন্ধরা এলাকার ভেতরে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যেই বসুন্ধরা গেটের ভেতরে আটকে পড়া লোকজন সতর্কতার সঙ্গে বের হয়ে আসছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ‘বসুন্ধরা গেটের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় তারা অবস্থান নিয়েছিল যেন কোনও বিশৃঙ্খলা না হয়। পরে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়। পরে হামলাকারীরা বসুন্ধরার গেটের ভেতরে ঢুকে পড়লে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। তবে কারা হামলা করেছে তা তারা এখনও জানেন না।’ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে গ্রামীণফোন অফিসের সামনের দিকে অগ্রসর হতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। টিযারসের নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশ।
তবে স্থানীয়দের ভাষ্য, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে প্রথমে একত্রিত হয়। পরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গ্রামীণফোন অফিসের সামনে থেকে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষ চলাকালে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ বিভাগের প্রধান বেলাল আহমেদ বলেন, পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। তারা কারও কথা মানছে না। এই ঘটনার কারণে আমরা নিজেরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছি।

Please follow and like us:

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial