ঢাকাসোমবার , ২৯ জানুয়ারি ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মার্কিন সেনা নিহত, ইরানে হামলা চালাতে চাপে বাইডেন

editor
জানুয়ারি ২৯, ২০২৪ ১০:৩৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আজকের প্রভাত ডেস্ক: জর্ডান-সিরিয়া সীমান্তে ইরানপন্থি ইরাকি গোষ্ঠীর হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহতের পর ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ বা দেশটিতে হামলার জন্য রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর। এত দিন পর্যন্ত তিনি এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত ছিলেন। তার আশঙ্কা ছিল, এমন পদক্ষেপে বৃহত্তর যুদ্ধের সূত্রপাত হতে পারে। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হামলার প্রতিশোধ নিতে বাইডেনের হাতে অনেকগুলো বিকল্প রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ইরানের বাইরে ইরানি সেনাদের অবস্থানে হামলা থেকে শুরু করে ইরানের অভ্যন্তরে হামলা। অথবা আরও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে হামলায় জড়িত ইরানপন্থি গোষ্ঠীটির ওপর সুনির্দিষ্ট হামলা।
অক্টোবরে গাজায় হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইরাক, সিরিয়া, জর্ডান ও ইয়েমেনের উপক‚লে ইরানপন্থি গোষ্ঠীগুলোর দেড় শতাধিক হামলার শিকার হয়েছে মার্কিন সেনারা।
কিন্তু রবিবার জর্ডানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিরিয়া সীমান্তের কাছে টাওয়ার ২২ নামে একটি প্রত্যন্ত ফাঁড়িতে হামলাটির আগ পর্যন্ত কোনও মার্কিন সেনা নিহত হননি বা এত সংখ্যায় আহত হননি। এই হামলার পর বাইডেনের সামনে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তেহরানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়েও ইরানপন্থি গোষ্ঠীগুলোকে শায়েস্তা করার সুযোগও পাচ্ছেন তিনি। বাইডেন বিস্তারিত না জানিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশোধ নেবে।
রিপাবলিকানরা অভিযোগ করেছেন, মার্কিন সেনাদের শত্রæদের সহজ নিশানায় পরিণত করে ফেলছেন বাইডেন। তিনি অপেক্ষা করছেন সেই দিনের, যেদিন একটি ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি প্রতিরক্ষা ফাঁকি দিয়ে আঘাত করবে। রবিবার সেই দিন চলে এসেছে। যখন মাত্র একটি ড্রোন ঘাঁটির ব্যারাকের কাছে আঘাত হানে। তারা বলছেন, পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইরানে হামলা চালানো উচিত বাইডেনের।
রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন বলেছেন, তিনি (বাইডেন) আমাদের সেনাদের সহজ নিশানায় পরিণত করেছেন। এই হামলার একমাত্র জবাব হতে হবে ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের সামরিক প্রতিশোধ।
প্রতিনিধি পরিষদের সামরিক তদারকি কমিটির প্রধানের দায়িত্বে থাকা রিপাবলিকান প্রতিনিধি মাইক রজার্সও তেহরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আহŸান জানিয়েছেন।
রজার্স বলেছেন, শেষ পর্যন্ত সন্ত্রাসী ইরানি সরকার এবং তাদের সমর্থিত চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলো যেসব হামলা চালিয়েছে সেগুলোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এমনিতেই দেরি করে ফেলেছেন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলাকে বাইডেনের দুর্বলতা ও আত্মসমর্পণের পরিণতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বাইডেন প্রশাসন বলছে, বিশ্বজুড়ে মার্কিন সেনাদের সুরক্ষায় অনেক কিছু করা হচ্ছে।
রিপাবলিকানরা সোচ্চার হলেও মাত্র একজন ডেমোক্র্যাট প্রকাশ্যে গাজায় ইসরায়েল-হামাস সংঘাত নিয়ে বাইডেনের কৌশলের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে যুদ্ধবিরতির আহŸান পুনরায় জানিয়ে তিনি বলেছেন, আমরা এখন দেখছি তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ হিসেবে সংঘাতের সূত্রপাত শুরু হচ্ছে। দুর্ভাগ্যবশত, যুক্তরাষ্ট্র ও আমাদের সেনারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
খুব সহজ না: ইরাকে মেরিন হিসেবে চারবার মোতায়েন হওয়া ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি সেথ মউল্টন রিপাবলিকানদের আহŸান জানিয়েছেন যুদ্ধের ডাক দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য। তিনি বলেছেন, প্রতিরোধ কঠিন, যুদ্ধ আরও খারাপ। যুদ্ধবাজরা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের ডাক দিচ্ছে, আপনারা শত্রুদের পরিকল্পনা মতো কাজ করছেন। আমার দেখতে ভালো লাগবে যদি আপনারা নিজের ছেলে ও মেয়েদের লড়াইয়ের জন্য পাঠাচ্ছেন। আমাদের সময় ও সুযোগ মতো একটি কার্যকর, কৌশলগত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, ইরানের অভ্যন্তরে ইরানি সেনাদের ওপর যেকোনও হামলার কঠিন জবাব দিতে বাধ্য হবে তেহরান। যা উত্তেজনাকে এমনভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে, ফলে মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়াবে।
সেন্টার ফর এ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির মধ্যপ্রাচ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক জনাথন লর্ড বলেছেন, ইরানের ভেতরে হামলার ফলে দেশটির শাসক গোষ্ঠীর ঠিকে থাকা নিয়ে তেহরানে প্রশ্নের জন্ম দেবে। প্রকাশ্যে ইরানের বিরুদ্ধে করলে তা বড় ধরনের উত্তেজনা বাড়াবে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট-এর চার্লস লিস্টার বলছেন, সম্ভাব্য প্রতিশোধের নিশানা হতে পারে ইরাক বা সিরিয়ায় ইরানপন্থি গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী বা বড় কোনও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা। গত দুই থেকে তিন মাসে প্রক্সি গোষ্ঠীগুলো যা করে আসছে রবিবারের হামলা ছিল একেবারে ভিন্ন কিছু। ইরানে কিছু করার আহŸান থাকলেও আমি মনে করি না প্রশাসন এই ফাঁদে পা দেবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপগুলো এখনও অস্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্র সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত না হলে ইরানের হামলা চালিয়ে আমরা কী অর্জন করব।
তবু জনাথন লর্ড ও অপর বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করছেন যে, সিরিয়া অনেক বছর ধরে ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে অনেক হামলা চালিয়ে আসছে। তেহরানের সঙ্গে সংঘাতে না জড়িয়েই ২০ জানুয়ারি দামেস্কে ইরানের বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীর চার কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে।
গত কয়েক মাসে ইরানের বাইরে ইরান সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও। নভেম্বরে মার্কিন সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা শুধু ইরানপন্থি গোষ্ঠী নয়, ইরানের বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীর ওপরও হামলা চালিয়েছে।
কিন্তু লিস্টার বলছেন, অতীতে ইরানের বাইরে ইরানি কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২০ সালে ড্রোন হামলায় ইরানি জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করা হয়েছিল। এমন হামলার পর ইরানের সীমিত প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
তার মতে, তাই, যদি বড় পদক্ষেপ ও আঘাত করা হয় তাহলে ইরান যে নমনীয় হয় তেমন ইতিহাস আমরা দেখেছি।

Please follow and like us:

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial