ঢাকাশুক্রবার , ৮ নভেম্বর ২০১৯
আজকের সর্বশেষ সবখবর

যেসব যৌন সমস্যা অবহেলা করবেন না

editor
নভেম্বর ৮, ২০১৯ ১:১০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

লাইফস্টাইল ডেস্ক: মানব সভ্যতা টিকে থাকার পিছনে যৌনজীবনের গুরুত্ব রয়েছে। সাধারণত শারীরিক ও মানসিক সুখের আশায় পুরুষ নারীর সঙ্গ চায়, সহবাসে লিপ্ত হয়। কিন্তু সুখের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে যৌন সমস্যা। ব্যক্তিভেদে সহবাসের অভিজ্ঞতা ভিন্ন হতে পারে- কেউ সুখ পেতে পারে, কেউ হতে পারে অসুখী। এই অসুখী বা অতৃপ্ত হওয়ার কারণ যৌন সমস্যা। অনেকে মাসের পর মাস অথবা বছরের পর বছর যৌন সমস্যায় ভুগলেও চিকিৎসকের কাছে যান না লজ্জায় বা ভয়ে। কিন্তু এটি অবহেলা করা উচিত নয়। যৌন সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।
সহবাসের সময় জ্বালাপোড়া: ভেস্টিবিউলোডাইনিয়া হলো সাধারণ একটি সমস্যা। এ অবস্থায় যৌনমিলনের সময় যোনিমুখে জ্বালাপোড়ার মতো ব্যথা অনুভূত হয়। প্রায় সময়ই ভ্যাজাইনার গভীরে নয়, বরং ভ্যাজাইনার ভেস্টিবিউল অংশে পেনিস প্রবেশ করলেই ব্যথা অনুভব হয়। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ লিসা এম. ভেলি বলেন, ‘ভেস্টিবিউলোডাইনিয়ার সাবটাইপ রয়েছে। তাই যৌন সমস্যার বিস্তারিত ইতিহাস, দৃষ্টিলব্ধ পরীক্ষা, পেলভিক ফ্লোরের পেশি ও অস্থি সংক্রান্ত পরীক্ষা ও নিউরোসেন্সরি টেস্টিংয়ের মাধ্যমে এ সমস্যার প্রকৃত ধরন শনাক্ত করে চিকিৎসা করতে হবে।’
সহবাসের সময় প্রচণ্ড ব্যথা : যন্ত্রণাদায়ক যৌনমিলনের মেডিক্যাল টার্ম হলো ডিসপারিউনিয়া। নারী ও পুরুষ উভয়েই সহবাসের সময় ব্যথায় ভুগতে পারেন, কিন্তু পুরুষদের তুলনায় নারীদের ডিসপারিউনিয়া বেশি হয়। ‘মাই হাসবেন্ড ওন্ট হ্যাভ সেক্স উইথ মি’র লেখক, ক্লিনিক্যাল সেক্সোলজিস্ট ও রিলেশনশিপ এক্সপার্ট ডন মাইকেল বলেন, ‘শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক উভয় ধরনের ফ্যাক্টর দ্বারা ডিসপারিউনিয়া হতে পারে।’ এ ধরনের সমস্যায় নারী-পুরুষের সম্পর্ক ছিন্ন হতে পারে। ‘গেটিং দ্য সেক্স ইউ ওয়ান্ট’র লেখক ও সেক্স থেরাপিস্ট টামি নেলসন বলেন, ‘সহবাসের সময় ব্যথা উপশম করতে সিলিকন-বেসড লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করুন এবং অ্যান্টিহিস্টামিনের ব্যবহার কমিয়ে ফেলুন, কারণ এ ওষুধ ভ্যাজাইনার টিস্যু শুষ্ক করতে পারে। তারপরও ব্যথা অনুভূত হলে গাইনিকোলজিস্ট বা ইউরোলজিস্টের কাছে যেতে দেরি করবেন না।’
অকালে বীর্যপাত : শরীর থেকে বীর্য বের হওয়াকে ইজাকুলেশন বলে। যৌনমিলনে বেশি সময় ধরে তৃপ্তি পেতে প্রত্যেক পুরুষই চাই ইজাকুলেশন দেরিতে হোক। কিন্তু অনেক পুরুষের এই চাওয়া পূরণ হয় না। অনেক পুরুষের স্বাভাবিক সময়ের পূর্বেই ইজাকুলেশন হয়ে যায়- এ সমস্যাকে বলে প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন বা অকালে বীর্যস্খলন। প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশনের ক্ষেত্রে পেনিস ভ্যাজাইনাতে প্রবেশের পূর্বে অথবা প্রবেশ করামাত্র বীর্যপাত হয়। ডা. নেলসন বলেন, ‘এটা মনে রাখবেন যে অধিকাংশ পুরুষ যৌনমিলনের সময় গড়ে চার মিনিট পর্যন্ত বীর্য ধরে রাখতে পারে, তাই আপনার বীর্যস্খলন এর কাছাকাছি সময়ে হলে দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই, আপনি সম্ভবত স্বাভাবিক রেঞ্জে আছেন।’ কিন্তু প্রতিনিয়ত উত্তেজিত হওয়ামাত্র বীর্যপাত হয়ে গেলে একজন সেক্স থেরাপিস্টের কাছে যান। যেসব পুরুষের অকালে বীর্যস্খলন হয় তারা কেজেল এক্সারসাইজ থেকে উপকার পেতে পারেন।
ভ্যাজাইনার শুষ্কতা : অধিকাংশ নারী এ যৌন সমস্যাটিকে অমীমাংসিত রেখে দেন। ডা. ভেলি বলেন, ‘স্তন্যপান করানো, ঋতুবন্ধের পূর্বে হরমোনগত পরিবর্তন অথবা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে ভ্যাজাইনা শুষ্ক হতে পারে। যেসব নারী বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ান, তাদের ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যায়- এটি ভ্যাজাইনার পিচ্ছিলতা হ্রাস করে। ঋতুবন্ধের কাছাকাছি সময়ে হরমোনগত পরিবর্তনও পিচ্ছিলতা কমিয়ে ফেলে এবং ভ্যাজাইনার টিস্যুকে পাতলা করে।’ ভ্যাজাইনার শুষ্কতায় লুব্রিকেন্ট ও ময়েশ্চারাইজার সহায়ক হতে পারে।
গভীর সঙ্গমে ব্যথা : সহবাসের সময় জরায়ুমুখে পেনিস হিট করলে এ ধরনের ব্যথা হয় এবং এ সমস্যাটি কিছু সেক্স পজিশনে বেশ কমন (যেমন- পেছন থেকে সহবাস করা), বলেন ডা. মাইকেল। তিনি আরো বলেন, ‘মাসিক চক্রের সময় জরায়ুমুখ আরো স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে, শুষ্ক ভ্যাজাইনার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি এটাকে সার্ভিক্স বাম্প হিসেবে রেফার করি- কখনো কখনো উত্তেজনা ও সেক্স পজিশনের ওপর ভিত্তি করে ভালো অনুভব হতে পারে, কিন্তু অন্যান্য সময় তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।’ ডা. মাইকেল ব্যথা ছাড়াই সর্বোচ্চ যৌনসুখ পেতে সঙ্গীর সঙ্গে সেক্স পজিশন অ্যাডজাস্ট করতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
এন্ডোমেট্রিয়োসিস : সহবাসের সময় পেলভিসের গভীরে ব্যথা হতে পারে এন্ডোমেট্রিয়োসিসের অন্যতম লক্ষণ। আমরা জানি যে জরায়ুর ভেতরের স্তরে এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু বিকশিত হয়, কিন্তু কোনো কারণে এ টিস্যু জরায়ুর বাইরে বিকশিত হলে তাকে এন্ডোমেট্রিয়োসিস বলে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবসাইট ওমেন’স হেলথের উপাত্ত অনুযায়ী, সে দেশে আনুমানিক ১১ শতাংশ নারীর এন্ডোমেট্রিয়োসিস রয়েছে।
পিআইডি : পেলভিসের গভীরে ব্যথার আরেকটি সম্ভাব্য কারণ হলো পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ (পিআইডি) বা পেলভিসে প্রদাহজনিত রোগ। লাইসেন্সড প্রফেশনাল কাউন্সেলর ওয়েন্ডি এল ডামব্রোফ বলেন, ‘পিআইডি হলো জরায়ু ও ডিম্বনালির একটি ইনফেকশন, যা প্রায়সময় যৌনবাহিত ইনফেকশনের জীবাণু দ্বারা হয়ে থাকে, শুধু তাই নয় অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া দ্বারাও এ রোগ হতে পারে। চিকিৎসা করা না হলে পিআইডি ইক্টোপিক প্রেগন্যান্সি বা ডিম্বনালিতে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানে অক্ষমতার কারণ হতে পারে, কারণ এ রোগে ডিম্বনালির ভেতর ও বাইরে স্কার টিস্যু জমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, যার ফলে ডিম্বনালি অতিক্রম করে জরায়ুতে পৌঁছতে পারে না।’
ইরেক্টাইল ডিসফাংশন : আমরা জানি, ইরেক্টাইল ডিসফাংশন হলে পুরুষদের ইরেকশন বা লিঙ্গোত্থান হয় না। এর প্রধান কারণ, পুরুষাঙ্গে রক্ত প্রবাহের ঘাটতি। ডা. মাইকেল বলেন, ‘ধমনীতে প্রতিবন্ধকতা থাকলে আপনার পুরুষাঙ্গ সঙ্গিনীকে খুশি করার মতো তেজি হতে পারবে না। তখন অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ পুরুষাঙ্গ ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অংশে যথেষ্ট রক্তপ্রবাহ না হলেও আপনি সহবাসে অক্ষম হতে পারেন।’
জ্বালাপোড়া বা চুলকানি : যদি আপনার শরীরের গোপনাংশে চুলকায় অথবা জ্বালাপোড়া করে, তাহলে সম্ভবত আপনার ইস্ট ইনফেকশন অথবা ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস হয়েছে। ডা. মাইকেল বলেন, ‘ক্যানডিডা ইস্টের ভারসাম্য হারালে ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে- হরমোনের মাত্রায় পরিবর্তন, ডুশ করা বা ভ্যাজাইনাল স্প্রে, দুর্বল ইমিউন সিস্টেম, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে এই ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।’ যেহেতু এই ইনফেকশন যৌনমিলনের মাধ্যমে ছড়াতে পারে, তাই সেরে না ওঠা পর্যন্ত সহবাস থেকে বিরত থাকা উচিত।
অর্গাজমে কাঠিন্য : কিছু নারীর সহজে অর্গাজম হয় না। এ প্রসঙ্গে ইয়েল ইউনিভার্সিটির অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গাইনোকোলজির ক্লিনিক্যাল প্রফেসর মেরি জেন মিনকিন বলেন, ‘অনেক নারী মনে করেন, এটি সমস্যা, কিন্তু আসলে তা নয়। অধিকাংশ নারীর অর্গাজমের জন্য কিছু মাত্রায় ক্লিটোরাল স্টিমিউলেশন (ক্লিটরিসে উদ্দীপনা) প্রয়োজন। কেবলমাত্র ভ্যাজাইনাল স্টিমিউলেশনে তাদের অর্গাজম হয় না। ক্লিটরিস উদ্দীপ্ত করার পরও আপনার অর্গাজম না হলে তখন বুঝতে হবে সমস্যা হয়েছে।’
পেনিস ফ্র্যাকচার : আনকমন হলেও পুরুষের পেনিসে ফ্র্যাকচার হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি অব হিউম্যান সেক্সুয়ালিটির অন্তর্ভুক্ত ক্লিনিক্যাল সেক্সোলজির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর স্টিভ ম্যাকগাফ বলেন, ‘লিঙ্গোত্থানে সাহায্যকারী দুটি অংশ হলো করপোরা কেভারনোসা ও পেনাইল শিথ বা টিউনিকা অ্যালবুজিনিয়া নামক নমনীয় পর্দা। কোনো কারণে পেনিসের এ দুটি অংশ ভেঙে যাওয়া বা ফেটে যাওয়াকে পেনিস ফ্র্যাকচার বলে।’ সাধারণত সহবাস বা হস্তমৈথুনের সময় পেনিস খুব বেশি বেঁকে গিয়ে এ ধরনের ফ্র্যাকচার হয়। অথবা দুর্ঘটনাজনিত ট্রমা থেকেও পেনিস ফ্র্যাকচার হতে পারে।
গোপনাঙ্গে আঁচিল : সাধারণত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) দ্বারা জেনিটাল ওয়ার্ট বা যৌনাঙ্গে আঁচিল হয়ে থাকে। এই কমন যৌনবাহিত রোগটি প্রায়ক্ষেত্রে অগোচরে থেকে যায়। ডা. ম্যাকগাফ বলেন, ‘যেহেতু যৌনাঙ্গের আঁচিল জরায়ুমুখ বা মলদ্বারে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে, তাই এই ইনফেকশন যত দ্রুত সম্ভব শনাক্ত ও চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রতিনিয়ত যৌন উত্তেজনা : অনেক লোক মোটেই উত্তেজিত হতে পারেন না বলে দুশ্চিন্তা করেন। আবার কিছু লোকের ক্ষেত্রে এর বিপরীত ঘটে। প্রতিনিয়ত যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়াকে পারসিস্টেন্ট জেনিটাল অ্যারাউজাল ডিসঅর্ডার (পিজিএডি) বলে। নারীদের ক্ষেত্রে এর মানে হলো, তারা না চাইলেও প্রতিনিয়ত ক্লিটোরিয়াল অর্গাজম হচ্ছে। ডা. নেলসন বলেন, ‘এটি হাস্যকর মনে হলেও বিষয়টি মোটেই অবহেলার নয়। সমস্যাটি একজন মানুষকে যন্ত্রণা দিতে পারে, বিব্রত করতে পারে ও জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।’ আপনার পিজিএডি থাকলে গাইনোকোলজিস্ট অথবা পেলভিক ফ্লোর থেরাপিস্টের শরণাপন্ন হোন।

Please follow and like us:

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial