স্বাস্থ্যকথা : ক্যানসারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যথাযুক্ত ক্যানসার হিসেবে স্টমাক ক্যানসার বা পাকস্থলী ক্যানসার পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু এ রোগে ভুক্তভোগীদের অনেকের মধ্যে ব্যথা এ রোগের প্রাথমিক সতর্কীকরণ উপসর্গ নয়।
নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হেলথ সিস্টেমের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং সার্জিকেল অনকোলজিস্ট ইউমার্ট সার্পেল বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, পাকস্থলী ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ের সবচেয়ে অধিক কমন বৈশিষ্ট্য হতে পারে- এ পর্যায়ে তেমন উল্লেখযোগ্য উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মাঝেমধ্যে পাকস্থলী ব্যথা অনুভব করে থাকি এবং তা লোকজনকে পাকস্থলী ক্যানসারের কথা মনে করিয়ে দুশ্চিন্তায় ফেলে।’ তিনি যোগ করেন, ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাকস্থলী ব্যথা পাকস্থলী ক্যানসারের রেজাল্ট নয়।’
পাকস্থলী ক্যানসার হওয়ার মাত্রা কেমন? আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির মতে, মোটামুটিভাবে, ১১১ জন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে একজন তার জীবনকালে কোনো না কোনো সময় পাকস্থলী (গ্যাস্ট্রিক) ক্যানসারে ভুগবে এবং এ রোগটি পুরুষদের মধ্যে অধিকতর কমন। ডা. সার্পেলের মতে, ‘আপনার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার মধ্যে এ রোগ হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।’
সাধারণত পাকস্থলী ক্যানসার উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত কোনো রোগ নয়। ডা. সার্পেল বলেন, ‘অধিকাংশ পাকস্থলী (গ্যাস্ট্রিক) ক্যানসার বিক্ষিপ্ত এবং এ ক্যানসার হয়ে থাকে এলোমেলোভাবে ডিএনএ মিউটেশনের ফলে।’
এ প্রতিবেদনে পাকস্থলী ক্যানসারের ৬টি উপসর্গ দেওয়া হলো, যার সম্পর্কে আপনার সচেতন হওয়া উচিত।
১. মল বা বমির সঙ্গে রক্ত বের হওয়া: ডা. সার্পেল বলেন, ‘পাকস্থলী ক্যানসারের নিশ্চিত উপসর্গ ছাড়াও কোলাইটিস এবং ক্রোনস ডিজিজ উভয় ক্ষেত্রেই রক্তমল হতে পারে, মল বা বমি যে কোনো একটার সঙ্গে রক্ত যাওয়া ডিমান্ড করে যে আপনি একজন জিআই ডাক্তারের কাছে যান।’ যদি রক্তপাত পাকস্থলী ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়, তাহলে আপনার মলের রক্ত মেরুন বা আলকাতরার মতো কালো হতে পারে। অন্যদিকে, বমির রক্ত উজ্জ্বল লাল হতে পারে এবং বমির গঠন হতে পারে অসূক্ষ কফি গ্রাউন্ডের মতো, কারণ এটি আংশিকভাবে হজম হয়েছে।
২. দ্রুত ক্ষুধা চলে যাওয়া: আপনি ক্ষুধার্ত ছিলেন, যখন আপনি খেতে বসলেন- কয়েক গ্রাস বা কামড়ের পর আপনার ক্ষুধা চলে গেছে এবং খাবারটি খেতে আর ভালো লাগছে না। এটি হতে পারে পাকস্থলী ক্যানসারের অন্যতম উপসর্গ। ডা. সার্পেল বলেন, ‘বিশেষ করে যদি আপনার ক্ষুধা সচরাচরের তুলনায় দ্রুত মিটে যায়, তাহলে আপনার একে অবহেলা করা উচিত নয়।’
৩. অন্ত্রে ব্যথা হওয়া: কিছুক্ষেত্রে পাকস্থলী ব্যথা পাকস্থলী ক্যানসারের উপসর্গ। ডা. সার্পেল বলেন, ‘কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনার ব্যথা অন্যান্য অন্ত্র বা পেটের অসুস্থতার কারণে হতে পারে, ক্যানসারের জন্য নয়।’ তিনি বলেন, পাকস্থলী ক্যানসার সম্পর্কিত ব্যথার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ব্যথা অনবরত হবে এবং ব্যথা হবে ‘কামড় খাওয়া’ প্রকৃতির। তিনি আরো বলেন, ‘এটি এমন কিছু নয় যে আপনি শুধু একদিনের জন্য অনুভব করবেন, এটি দুই সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে এবং আবারো ফিরে আসতে পারে।’ তিনি যোগ করেন, ‘আপনার পাকস্থলীর মধ্যখানে নিস্তেজ ব্যথা হচ্ছে ক্লাসিক পাকস্থলী ক্যানসার ব্যথা।’
৪. অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন হ্রাস পাওয়া: ডা. সার্পেল বলেন, ‘অনেক শারীরিক অবস্থা, যেমন- টাইপ-১ ডায়াবেটিস, অ্যাডিসন’স ডিজিজ এবং ক্রোন’স ডিজিজ, অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কমাতে পারে। এ তালিকায় পাকস্থলী ক্যানসার অন্তর্ভুক্ত করুন।’ তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘যদি আপনি ওজন হারাতে থাকেন এবং ডায়েটিং না করেন, তাহলে তা এমন কিছু যাতে আপনার মনোযোগ দেওয়া উচিত।’ এরকম ওজন হ্রাসের ব্যাপারে সচেতন থাকুন, কারণ এই ওজন হ্রাস ধীরে ধীরে হতে পারে। হঠাৎ ওজন হ্রাসের বিষয়টি আপনার লক্ষ্যে নাও আসতে পারে। এজন্য নির্দিষ্ট সময় পরপর আপনি স্কেলের সাহায্য নিতে পারেন। ৬ মাসের মধ্যে কয়েক পাউন্ড ওজন হ্রাসের জন্য দুশ্চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আপনার প্রচেষ্টা ব্যতীত উল্লেখযোগ্যভাবে ওজন হ্রাস পেয়ে থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
৫. বুকজ্বালা হওয়া: ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের এমডি অ্যান্ডারসন ক্যানসার সেন্টারের রিসোর্স অনুসারে, বুকজ্বালা, বদহজম এবং অসুস্থ অন্ত্রের অন্যান্য কমন উপসর্গও হতে পারে পাকস্থলী ক্যানসারের প্রাথমিক সতর্কীকরণ উপসর্গ। ডা. সার্পেল বলেন, ‘এরকম উপসর্গসমূহ ক্যানসারের তুলনায় অন্যান্য শারীরিক দুরবস্থার নির্দেশক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’ কিন্তু উপসর্গ যেটারই হোক না কেন, আপনার উচিত হবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া।
৬. পেটফোলা, ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া: আপনার পাকস্থলীতে ক্যানসার বিকশিত হলে আপনার পেটফোলা, ডায়রিয়া/কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা বাওয়েল মুভমেন্ট বা মলত্যাগে বিশৃঙ্খলা হতে পারে। এসব উপসর্গের প্রত্যেকটা এককভাবে ক্যানসারের লক্ষণ না হলেও এদের সঙ্গে এ প্রতিবেদনের অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে আপনাকে ক্যানসার সম্পর্কিত ফলো-আপ টেস্টিং করতে হতে পারে, যদি আপনার ডাক্তার এসবের জন্য অন্য কোনো সমস্যাকে চিহ্নিত না করে। তথ্যসূত্র : ম্যানস হেলথ